Saturday, May 21, 2016

বোহেমিয়ান ডায়েরী- পর্ব(৪)


পোল্যান্ডে প্রবেশ
শহরের নাম পজনান (Poznan)











বার্লিন থেকে পোল্যান্ড পৌঁছতে প্রায় চারঘন্টা লেগে গেল। বাসের সহযাত্রীদের সঙ্গে এরই মধ্যে বেশ আলাপ জমে উঠেছে।  ৪৭ জনের মধ্যে আমরা ছাড়া কুয়েতবাসী এক কেরালাইট দম্পতি আছেন। বেশ হাসিখুশি মহিলাটি, আমার সমবয়সী। হালকা হাসি, ঠাট্টা মশকরা, একসাথে হাইওয়েতে দাঁড়িয়ে টয়লেটে থামা কিম্বা কফি খেতে খেতে ভারত-গল্পে মশগুল হওয়া...ভালোই লাগে বিদেশ বিভুঁইয়ে। তবে যেইমাত্র শুনলাম কলকাতার নামে তার নাক বেঁকানো আর কলকাতাকে দরিদ্রসীমার নীচে বলে ছোট করা তখন‌ই মনে মনে বলি আর নয় বাপু, এবার দূরে দূরে চল...যাইহোক আমার কলকাতা, তিলোত্তমা, কল্লোলিনী...তার অনেক রূপ এক অঙ্গে।  তাকে বলেই ফেলি, তুমি কলকাতা গিয়েছ কখনো? লিভিট নামের ঐ কেরালাইট মহিলা বলল, না, কিন্তু খুব সস্তা শুনেছি। আমি বললাম তুমি আগে যা শুনেছ, সেই কলকাতা এখন আর নেই। তারপরেই মনেমনে বলি, সত্যি কি তাই? আমাদের কলকাতা কি সত্যি বদলেছে?   



যাইহোক পোল্যান্ডে পা রেখেই মনে হল কি সুন্দর, শান্ত, রুচিশীল একটা দেশ। সেখানেও ট্রাম। এবার কারেন্সি বদল। Euro ভাঙিয়ে  Zloty । আর পলিশ লোকজনের কি সুন্দর সাজপোষাক তাদের মানানস‌ই গায়ের রং আর টিকোলো নাক-ঠোঁটের সাথে  । মনে আমি বললাম এত রূপসর্বস্বতায় আর কি আসে যায়! শুনেই রাহুল বলল, মা ওয়ার্ল্ডস বেষ্ট সফটওয়ার প্রোগ্র্যামার আর ফ্রম পোল্যান্ড। বললাম, তাহলে এরা রূপে কার্তিক, গুণে গণেশ ...কি বল? ছেলে বলল, অন্ততঃ আমাদের ইউএস ইউনিভার্সিটিতে তো তাই দেখি।  



 পজনান পোল্যান্ডের পুরোণো রাজধানী শহর। বাস আমাদের ওল্ড টাউন স্কোয়ারে নামিয়ে দিল শহর ঘুরে দেখবার জন্য।    লক্ষ্য করলাম প্রাচীন পোল্যান্ডের গথিক স্থাপত্য। সেদিন টাউন স্কোয়ারে একপাল স্কুলের খুদেরা এসেছে। সেখানে চার্চের মাথায় এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটে প্রতিদিন দুপুর বারোটায়। কিছুটা কিংবদন্তীর ভেলায় ভেসে চললাম আমরাও।  
এই পজ্নান শহরের ওল্ড টাউন হলের শেফ হরিণের মাংস রান্না করছিল। আগুণের আঁচে সেই হরিণের মাংস এতটাই বেশী পুড়ে গেল যে শেফ তখন তাড়াতাড়ি পাশের একটি মাঠ থেকে দুটো চরে খাওয়া ছাগল ধরে এনে পোড়াতে গেল। হরিণের মাংসের বদলে ছাগলের মাংস‌ই রান্না হবে সেদিন। কিন্তু ছাগলদুটি বুঝতে পেরেই রান্নাঘর থেকে পালিয়ে ওল্ড টাউন হলের চার্চের মাথায় উঠে গেল। এবার স্এই থেকে স্থানীয় মানুষের মনে এক অদ্ভূত বিশ্বাস দানা বাঁধে। চার্চের ঘড়িতে ঠিক দুপুর বরোটায় ঘন্টাধ্বনি হয় আর দুটি যান্ত্রিক ছাগল বেলের মাথা থেকে একটি জানলা দিয়ে বেরিয়ে বাইরে দাঁড়াবে। আবার কিছুপরেই ভেতরে প্রবেশ করবে। ছোটছোট স্কুলপড়ুয়ারা এই দৃশ্য দেখবে বলে সেখানে বসে থাকে আবার দেখেই লাইন করে টিচারের সাথে চলে যায়। টাউন স্কোয়ারে সবকিছু গোটের আইকন। আর পজনান কে বলা হয়  The city of headbutting goats!

No comments:

Post a Comment