বোহেমিয়ান ডায়েরী (১) ফ্র্যাঙ্কফার্ট পর্বঃ
কলকাতার মেঘ ও মৌসুমীর টানাপোড়েনে মন দে উড়ান। প্ল্যান অনুযায়ী এটিহাডের বিমানে আবুধাবি ও সেখান থেকে ফ্যাঙ্কফার্ট। তারপর সেখান থেকে বাসে করে শুরু হবে বোহেমিয়ান সফর। কথায় বলেনা? ধর্মের কল বাতাসে নড়ে? কলকাতার বৃষ্টিকে অভিশম্পাত করা? বিমানবন্দরে বসেই ছিলাম বিন্দাস। সময় মত সিকিউরিটি চেকিং, ইমিগ্রেশান সব সেরে বিমানে উঠে পড়া হল। রানওয়েতে চোখের সামনে দিয়ে সব বিমান উড়ে গেল। আমাদের প্লেনটি ছুটল কিছুটা রানওয়েতে। তারপরেই বিপত্তি। অঝোরে বৃষ্টি ও সেইসাথে বহুপ্রত্যাশিত কালবৈশাখী নাড়া দিল আমাদের সফর। বিমানের জানলায় চোখ রেখে দেখছি গাছপালার উদ্দাম নৃত্য আর আছড়ে পড়া বৃষ্টির ফোঁটায় সপসপে প্লেনের জানলা। বাইরে কিছুই দেখা যায়না। হঠাত এত বৃষ্টি? প্লেন রানওয়েতে ইঞ্জিন বন্ধ না করেই ভিজছিল। একসময় তার জ্বালানী গেল ফুরিয়ে।
এরপর? তারপর আর কি? জ্বালানী ভরে নিয়ে আবার ওড়ার তোড়জোড় কিন্তু বোঝাই গেল আবুধাবি থেকে ফ্রাঙ্কফার্টের কানেক্টিং ফ্লাইটটি মিস করবই আমরা। ওদিকে আমার পুত্র ফিলাডেলফিয়া থেকে ফ্রাঙ্কফার্ট পৌঁছে যাবে। ট্রাফালগার নামক যে সংস্থাটির সাথে ১৬দিনের গাঁটছড়া বাঁধা হয়েছে তাদের শাটলটি আমরা পাবনা। বেশ টেনশান। শুধু হোয়াটস্যাপের দৌলতে ছেলেকে খবরটা দিয়ে কিছুটা নিশ্চিন্তি। সে যেন বাস নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে ফ্র্যাঙ্কফার্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে আর পিতৃমাতৃহীনতার বার্তাটি জনায় জনায় শুধিয়ে বলে আমার বাবা-মা "অন দ্যা ওয়ে টু ফ্যাঙ্কফার্ট, ফ্লাইট মিসড ডিউ টু ওয়েদার, ব্লা, ব্লা, ব্লা..."
ফ্র্যাঙ্কফার্ট এয়ারপোর্টে পৌঁছেই মন কেঁদে উঠল। ছেলেটার সঙ্গে কখন দেখা হবে? কিন্তু জানতে পারলাম সে আমাদের সাতচল্লিশ জনের গ্রুপের সঙ্গে ট্রাফালগার-ট্যুর ম্যানেজারের তত্ত্বাবধানে ফ্র্যাঙ্কফার্ট শহরের আশেপাশেই জ্ঞান নিতে ব্যস্ত। অগত্যা মধুসূদন। আমরা গ্যাঁটের কড়ি ভাঙিয়ে নিলাম এয়ারপোর্টে। ডলার থেকে ইউরো। তারপর নিজেরাই ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলে পোঁছে গেলাম। কিছুপরেই রাহুল ঘরে এসে ঢুকল। বহুদিনের অদর্শণে আকুলিবিকুলি প্রাণে কিছুটা স্বস্তি তখন তিনজনের। সন্ধ্যেবেলায় যখন আমাদের ট্যুর ম্যানেজার পলের সঙ্গে আলাপ হল তখন দেখি আমরা বাদে সকলেই রাহুলের বেশ পরিচিত হয়ে গেছে। সে রীতিমত আড্ডা দিয়েছে তাদের সাথে। আর মুকাজ্জি পরিবারের বিলম্বে ট্যুরে যোগদানের ইতিবৃত্তটি সকলের বেশ জানা হয়ে গেছে। আমরা হারিয়ে যাওয়া মাতা-পিতা মুকাজ্জি বেশ সেলিব্রিটি ষ্টেটাস নিয়ে ঘুরছি ফ্র্যাঙ্কফার্টের পথেঘাটে।
বেশ কনকনে ঠান্ডা আর সঙ্গে হাওয়া। সন্ধ্যে ছটার মধ্যেই শপিংমলের ফুডকোর্টে ঝাঁপ ফেলার তোড়জোড়।
অতএব চোখের সামনে পিত্জা হাট, ম্যাকডোনাল্ডসের সাজানো বাগানে চোখ রেখেই ক্ষুধার বাজারে অগ্নিতে ঘৃতাহুতি । বেরিয়ে এসে পথের ধারে বেশ ছিমছাম এক স্পোর্টস বারে গিয়ে তিনজনে বসলাম। তারপর টম-ইয়ম চিকেন স্যুপ আর বিশাল এক পিত্জা নিয়ে পাকিস্তানী ললনা হাসিমুখে উদয় হল। সঙ্গে ড্রাফট বিয়ার। গরম, সুস্বাদু স্যুপে সারাদিনের পথশ্রম নিমেষে উধাও। আর বিয়ারে চুমুক দিতেই জলশূন্যতা উবে গিয়ে শরীরটা বেশ হাইড্রেটেড তখন।
বেশ সস্তার রেস্তোরাঁটি। আর পিত্জাটিও বেশ ভাল। সবশুদ্ধ কুড়ি ইউরোতে তিনজনের ভরপেট খাওয়া। এবার হেঁটে ফিরে আসি হোটেলে। পরদিনের তোড়জোড় শুরু। মানে আমাদের শেডিউল মত বোহেমিয়ান সফর শুরু হল পরদিন ভোরে। হোটেলে স্নান সেরে ব্রেকফাস্ট ব্যুফেতে ঠিক সাড়ে ছটায়। তারপর পেটচুক্তিতে প্রাতঃরাশ সেরে জিনিষপত্র নিয়ে বাসে ওঠা। এই বড়সড় বাসটিই আমাদের সারাদিনের দোসর। আর বাসের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন কোণা থেকে জড়ো হওয়া সাত চল্লিশজনের সঙ্গে অহোরাত্র সৌজন্যবোধ, বন্ধুতা আর সর্বোপরি ট্যুর ম্যানেজার কাম গাইড জার্মাণ বিশাল বপুর পল ও রোমানিয়ান বাস ড্রাইভার সুদর্শণ জন আপাততঃ আমাদের সঙ্গী। সারাদিন বাসে ঘোরা আর দিনের শেষে হোটেলে গিয়ে বিশ্রাম। এই হল আপাততঃ আমাদের শয়নে স্বপনে জাগরণে বোহেমিয়ান ট্যুরের আয়োজন।
কলকাতার মেঘ ও মৌসুমীর টানাপোড়েনে মন দে উড়ান। প্ল্যান অনুযায়ী এটিহাডের বিমানে আবুধাবি ও সেখান থেকে ফ্যাঙ্কফার্ট। তারপর সেখান থেকে বাসে করে শুরু হবে বোহেমিয়ান সফর। কথায় বলেনা? ধর্মের কল বাতাসে নড়ে? কলকাতার বৃষ্টিকে অভিশম্পাত করা? বিমানবন্দরে বসেই ছিলাম বিন্দাস। সময় মত সিকিউরিটি চেকিং, ইমিগ্রেশান সব সেরে বিমানে উঠে পড়া হল। রানওয়েতে চোখের সামনে দিয়ে সব বিমান উড়ে গেল। আমাদের প্লেনটি ছুটল কিছুটা রানওয়েতে। তারপরেই বিপত্তি। অঝোরে বৃষ্টি ও সেইসাথে বহুপ্রত্যাশিত কালবৈশাখী নাড়া দিল আমাদের সফর। বিমানের জানলায় চোখ রেখে দেখছি গাছপালার উদ্দাম নৃত্য আর আছড়ে পড়া বৃষ্টির ফোঁটায় সপসপে প্লেনের জানলা। বাইরে কিছুই দেখা যায়না। হঠাত এত বৃষ্টি? প্লেন রানওয়েতে ইঞ্জিন বন্ধ না করেই ভিজছিল। একসময় তার জ্বালানী গেল ফুরিয়ে।
এরপর? তারপর আর কি? জ্বালানী ভরে নিয়ে আবার ওড়ার তোড়জোড় কিন্তু বোঝাই গেল আবুধাবি থেকে ফ্রাঙ্কফার্টের কানেক্টিং ফ্লাইটটি মিস করবই আমরা। ওদিকে আমার পুত্র ফিলাডেলফিয়া থেকে ফ্রাঙ্কফার্ট পৌঁছে যাবে। ট্রাফালগার নামক যে সংস্থাটির সাথে ১৬দিনের গাঁটছড়া বাঁধা হয়েছে তাদের শাটলটি আমরা পাবনা। বেশ টেনশান। শুধু হোয়াটস্যাপের দৌলতে ছেলেকে খবরটা দিয়ে কিছুটা নিশ্চিন্তি। সে যেন বাস নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে ফ্র্যাঙ্কফার্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে আর পিতৃমাতৃহীনতার বার্তাটি জনায় জনায় শুধিয়ে বলে আমার বাবা-মা "অন দ্যা ওয়ে টু ফ্যাঙ্কফার্ট, ফ্লাইট মিসড ডিউ টু ওয়েদার, ব্লা, ব্লা, ব্লা..."
ফ্র্যাঙ্কফার্ট এয়ারপোর্টে পৌঁছেই মন কেঁদে উঠল। ছেলেটার সঙ্গে কখন দেখা হবে? কিন্তু জানতে পারলাম সে আমাদের সাতচল্লিশ জনের গ্রুপের সঙ্গে ট্রাফালগার-ট্যুর ম্যানেজারের তত্ত্বাবধানে ফ্র্যাঙ্কফার্ট শহরের আশেপাশেই জ্ঞান নিতে ব্যস্ত। অগত্যা মধুসূদন। আমরা গ্যাঁটের কড়ি ভাঙিয়ে নিলাম এয়ারপোর্টে। ডলার থেকে ইউরো। তারপর নিজেরাই ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলে পোঁছে গেলাম। কিছুপরেই রাহুল ঘরে এসে ঢুকল। বহুদিনের অদর্শণে আকুলিবিকুলি প্রাণে কিছুটা স্বস্তি তখন তিনজনের। সন্ধ্যেবেলায় যখন আমাদের ট্যুর ম্যানেজার পলের সঙ্গে আলাপ হল তখন দেখি আমরা বাদে সকলেই রাহুলের বেশ পরিচিত হয়ে গেছে। সে রীতিমত আড্ডা দিয়েছে তাদের সাথে। আর মুকাজ্জি পরিবারের বিলম্বে ট্যুরে যোগদানের ইতিবৃত্তটি সকলের বেশ জানা হয়ে গেছে। আমরা হারিয়ে যাওয়া মাতা-পিতা মুকাজ্জি বেশ সেলিব্রিটি ষ্টেটাস নিয়ে ঘুরছি ফ্র্যাঙ্কফার্টের পথেঘাটে।
বেশ কনকনে ঠান্ডা আর সঙ্গে হাওয়া। সন্ধ্যে ছটার মধ্যেই শপিংমলের ফুডকোর্টে ঝাঁপ ফেলার তোড়জোড়।
অতএব চোখের সামনে পিত্জা হাট, ম্যাকডোনাল্ডসের সাজানো বাগানে চোখ রেখেই ক্ষুধার বাজারে অগ্নিতে ঘৃতাহুতি । বেরিয়ে এসে পথের ধারে বেশ ছিমছাম এক স্পোর্টস বারে গিয়ে তিনজনে বসলাম। তারপর টম-ইয়ম চিকেন স্যুপ আর বিশাল এক পিত্জা নিয়ে পাকিস্তানী ললনা হাসিমুখে উদয় হল। সঙ্গে ড্রাফট বিয়ার। গরম, সুস্বাদু স্যুপে সারাদিনের পথশ্রম নিমেষে উধাও। আর বিয়ারে চুমুক দিতেই জলশূন্যতা উবে গিয়ে শরীরটা বেশ হাইড্রেটেড তখন।
বেশ সস্তার রেস্তোরাঁটি। আর পিত্জাটিও বেশ ভাল। সবশুদ্ধ কুড়ি ইউরোতে তিনজনের ভরপেট খাওয়া। এবার হেঁটে ফিরে আসি হোটেলে। পরদিনের তোড়জোড় শুরু। মানে আমাদের শেডিউল মত বোহেমিয়ান সফর শুরু হল পরদিন ভোরে। হোটেলে স্নান সেরে ব্রেকফাস্ট ব্যুফেতে ঠিক সাড়ে ছটায়। তারপর পেটচুক্তিতে প্রাতঃরাশ সেরে জিনিষপত্র নিয়ে বাসে ওঠা। এই বড়সড় বাসটিই আমাদের সারাদিনের দোসর। আর বাসের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন কোণা থেকে জড়ো হওয়া সাত চল্লিশজনের সঙ্গে অহোরাত্র সৌজন্যবোধ, বন্ধুতা আর সর্বোপরি ট্যুর ম্যানেজার কাম গাইড জার্মাণ বিশাল বপুর পল ও রোমানিয়ান বাস ড্রাইভার সুদর্শণ জন আপাততঃ আমাদের সঙ্গী। সারাদিন বাসে ঘোরা আর দিনের শেষে হোটেলে গিয়ে বিশ্রাম। এই হল আপাততঃ আমাদের শয়নে স্বপনে জাগরণে বোহেমিয়ান ট্যুরের আয়োজন।
Aha choker samne niye ele je. Tomar songe songe amio Bohemian
ReplyDeleteThanks Nandita!
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteGhurchhi Tomar sathe...
ReplyDeleteGhurchhi Tomar sathe...
ReplyDeleteChhobir mato.... Sab jeno dekhte pachhi....Asadharon ....
ReplyDeletethank you so much Neena, Jaba!
ReplyDeletethank you so much Neena, Jaba!
ReplyDelete