Thursday, April 9, 2015

একটি দুরন্ত কালবৈশাখী এবং ইস্তারী পূর্ণিমা

ষ্টারের ছুটিতে চৈত্রের পূর্ণ চন্দ্র ছিল গতকাল। মানে যাকে বলা হয় চৈত্র পূর্ণিমা , আমি বলি ইস্তারী পূর্ণিমা এবং সেই সাথে চন্দ্রগ্রহণ। শরতকালের দুর্গাপুজোর পর যে পূর্ণিমাটি হয় তার নাম কোজাগরী। আমাদের লক্ষ্মীপুজো হয়। আর কালকের পূর্ণিমাটি ছিল বাসন্তী পুজোর পরের পূর্ণিমা। সেই অর্থে খুব জোরদার তিথি। হনুমানের নাকি জন্মতিথি। তাই বহু জায়গায় খুব ধুম করে ধর্ম পুজো হয় ঐ দিনে। কালীমন্দিরগুলিতেও খুব ধুম হয়। এর বেশী তথ্য আমার জানা নেই। 



ঐদিন বোলপুরের প্রান্তিক থেকে কঙ্কালীতলায় পুজো দিতে গিয়ে দেখি বিশাল লাইন। আমার এই নিয়ে ওখানে ৩৯বার যাওয়া হল। এমন ভীড় প্রথম দেখলাম। উত্তরবাহিনী কোপাই নদী, শ্মশান আর কুন্ডটি সব মিলিয়ে বেশ সুন্দর জায়গা। 


কাঞ্চী দেশে পড়িল কাঁকালি অভিরাম।
বেদগর্ভা দেবতা ভৈরব রুরু নাম।। 
সতীর দেহত্যাগের সময় মায়ের কাঁখাল বা কোমরের অংশ পড়েছিল এই কুন্ডে। তাই একান্ন পীঠের একটি পীঠ এটি। কঙ্কালীমায়ের ভৈরব হলেন রুরু, যাঁর স্বয়ংভূ লিঙ্গটি কালাপাহাড়ের অত্যাচারে বিনষ্ট । প্রাচীন মন্দিরটিও সংস্কারে কিছুটা বেঁচে আছে। সেখান থেকে ঐ পথ দিয়েই লাভপুরের ফুল্লরাতলা গেলাম। একান্নপীঠের অরেকটি পীঠ। অট্টহাসও বলে এই স্থানকে। সতীমায়ের অধরোষ্ঠ পড়েছিল এখানে। ভৈরবের নাম বিশ্বেশ। অপূর্ব ছবির মত পরিবেশ। সেখানে পুজো দিয়ে আমরা গেলাম আরো একটি প্রাচীন মন্দির দর্শণে। ফুল্লরাতলা থেকে গুণুটিয়া ঘাট। সেখান থেকে ময়ূরাক্ষী নদীর ওপর একটি অস্থায়ী রাস্তা দিয়ে বন জঙ্গল পেরিয়ে, ছোট ছোট গ্রামের মধ্যে দ্ইয়ে গিয়ে পড়লাম ন'পাড়া ও সেখান থেকে তারাপীঠের রাস্তায় কলেশ্বর শিবমন্দির। অতীতের নাম পার্বতীপুর। নবরত্ন আকৃতির মন্দিরটি একশো বছরের পুরণো। প্রাচীন মন্দির কালাপাহাড়ের অত্যাচারে ধ্বংস হয়ে যায়। এখানেও গর্ভগৃহের মধ্যে স্বয়ংভূ শিবলিঙ্গটি ভাঙা। 

কলেশ্বর দেখে আমাদের লাভপুরে তারাশঙ্কর ব‌ইমেলায় যাবার কথা। চয়নিকা কাগজটির সম্পাদক কৌশিক ভান্ডারী আমাদের জন্য ভালো ব্যবস্থা করেছিলেন। ভালো লাগল তাদের ব‌ইমেলার উদ্যোগ দেখে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মস্থান এই লাভপুর। আর পাশেই তাঁর উপন্যাসের স্মৃতি বিজড়িত হাঁসুলিবাঁক। 



কালবৈশাখী ও সেই সাথে শিলাবৃষ্টি কিছুটা হলেও ম্লান করে দিল আনন্দ। ফেরার পথে এমন শিলাবৃস্টির প্রকোপে পড়ব আশা করিনি। গাড়ির সামনে এক বাগাল ছেলে তার গরুদের তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। শিলের আঘাতে গরুগুলি এধার ওধার ছিটকে যাচ্ছিল ভয়ে। আর সেই সাথে বাঁশগাছগুলি এমন দুলছিল যে মনে হল ওরা যেন গরুগুলির গায়ে সজোরে আছড়ে পড়বে। রাস্তার দুপাশে মজুত হলুদ খড়ের গাদায় শিলের ধবধবে সাদা গোলাগুলো দেখে মনে হচ্ছিল কবিতা লিখতে কিন্তু সেই সময় শুধু মনে হয়েছে আমাদের জীবন কত ঠুনকো। প্রকৃতির রোষ কত কিছু করতে পারে। জোয়ার ভাঁটা আর অমাবস্যা-পূর্ণিমা সেই শক্তির অঙ্গুলি হেলনে হয়। পৃথিবী যে পূর্ণিমাতে চাঁদ আর সূর্যের মাঝখানে আসে সেই পূর্ণিমাতে চন্দ্রগ্রহণ হয়। কাল সত্যি সত্যি একটি ওজনদার তিথি ছিল। কি চরম ছিল মাধ্যাকর্ষণ! এই চৈত্রের শেষ পূর্ণিমা! কালাপাহাড়, কালবোশেখি মাথায় তখন তোলপাড়। কবিতা ভাবব কি কেমন যেন মুষড়ে পড়লাম !
জয় মা কঙ্কালী! জয় মা ফুল্লরা! জয় মা ইস্তারা ! ভালো রেখো সকলকে। রেখোঢেকো সকলকে!