Wednesday, December 5, 2012
Sunday, December 2, 2012
পটমায়া @ পিঙ্গলা
আজ খড়গপুর থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিঙ্গলা গেছিলাম । খুব খারাপ গ্রামের রাস্তা, যেতে প্রায় ঘন্টাদুয়েক লাগল ।হাতের মুঠোয় স্মার্টফোনে উন্মুক্ত একভর্তি গুগল ম্যাপ । দিশা দেখাল আমাদের ।
খড়গপুর আইআইটি ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে ষ্টেশনের দিকে না গিয়ে ঝপেটাপুর, ছোটা ট্যাংরা দিয়ে কৌশল্যার মোড় পড়ে । সেখান দিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের বারবেটিয়া, ধরে চওড়া পিচের রাস্তা দিয়ে একে একে পেরোতে লাগলাম চাঙ্গুয়াল, দক্ষিণ গেড়িয়া, মাওয়া হাটতলা, দুজিপুর বাজার । ডাইনে বাঁয়ে ধূ ধূ ধানজমি । অঘ্রাণের শেষের মাঝামাঝি ধান উঠেছে একপ্রস্থ । পিচের রাস্তায় ধান শুখোচ্ছে । আর পথের দুধারে স্তূপিকৃত খড়ের আঁটি । এল জামনা । তারপর আরো গিয়ে পিঙ্গলা । সেখানে নয়া নামে এক ছোট্ট গ্রামে বাংলানাটক-ডটকম আয়োজিত "পট-মায়া" দেখতে যাওয়া ।
পটশিল্পীদের গ্রাম নয়ায় আয়োজিত "পট মায়া" দেখলাম ঘুরে ঘুরে। নীল আকাশের নীচে, শীতের মিঠে রোদ্দুরে পা ছড়িয়ে গ্রামের ঘরে ঘরে পটুয়া, চিত্রকরেরা মাটীর ঘরের দাওয়ায় মেলে বসেছিল পটশিল্পের পসরা । ঘরের ঝি, বৌ, ছেলে সকলে মিলে এঁকে চলেছে । অবলীলাক্রমে এরা আঁকে । বংশ পরম্পরায় ধরে রাখে বাংলার এই ঐতিহ্যকে । প্রাকৃতিক রং দিয়ে আঁকছে তারা । শীলে বেটে নিচ্ছে কাঁচা হলুদ, শিমপাতার সবুজ, অপরাজিতা ফুলের নীল, গাঁদাফুলের পাপড়ি আর জাফরন বলে একটা কাঁটাওলা ফল যার ভেতরের লাল বীজগুলো থেকে লালরং বের করছিল ওরা । রংয়ের সঙ্গে কাঁচা বেলের আঠা মিশিয়ে তুলির টানে ফুটিয়ে তুলছে অভিনব শিল্পকর্ম । আর ছবি তৈরীর পর গান গেয়ে ব্যাখ্যা করছে ছবির বিষয়বস্তু। পটশিল্পীরা মাটীর পট, ফুলদানী হাতপাখা, টিশার্ট বানিয়ে সাজিয়ে রেখেছে । ঘরে ঘরে সকলের আজ মহামেলা । অনেক মানুষ এসেছিলেন কলকতা থেকে । ৩০শে নভেম্বর থেকে ২রা ডিসেম্বর অবধি চলল এই মেলা ।
Tuesday, November 13, 2012
দীপাবলী- ২০১২
কার্তিকের হিমপড়ার শুরু হয়েছে দুর্গাঠাকুর জলে যাবার ঠিক পরে পরেই । বিজয়া দশমী আর কোজাগরী উত্সবের শেষরেশটুকুনি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমাদের দেশের এক প্রাচীন শহর বারাণসীতে ।বারাণসীর পূর্বের নাম ছিল আনন্দবন । তারপর কাশী । বরুণা আর অসি এই দুই নদীর সঙ্গম তীর্থ বারাণসী বা বেনারস । গঙ্গায় এসে পড়েছে এই দুই ছোটনদী ঠিক এইখানে । কত বড় বড় মানুষ ঘাট বাঁধিয়েছেন গঙ্গার ধারে ধারে । তাঁদের নামে ঘাটের অধুনা নামকরণ । সবশুদ্ধ ৩৬৫ টি ঘাট রয়েছে এখানে । নৌকা করে কিম্বা পায়ে হেঁটে হেঁটে বেশ কয়েকটি পরিক্রমা ও করা যায় নদীর ধার দিয়ে । কত কত তীর্থপ্রেমী মানুষের আনাগোনা এই চির প্রাচীন মন্দিরময় শহরে । দেশবিদেশের পর্যটকরা কিসের আকর্ষণে সমবেত হন জানা নেই তবে দেশী তীর্থযাত্রীদের ভীড় ও নেহাত কম নয় এখানে । দশাশ্বমেধ ঘাটের পাশেই রাণী অহল্যাবাঈ হোলকার প্রতিষ্ঠিত কাশী বিশ্বনাথ মন্দির আর পাশেই অন্নপূর্ণা মায়ের মন্দির । কথিত আছে বহুযুগের প্রাচীন বিশ্বনাথ মন্দিরটি প্রথমে মহম্মদ ঘোরী, তারপর কুতুবুদ্দিন আইবক, ফিরোজ শাহ তুঘলক ও সবশেষে মোগল সম্রাট ঔরঙজেবের হুকুমে বিনষ্ট করে একটি মসজিদ তৈরী করা হয়েছিল । প্রাচীন শিবলিঙ্গকে পাশ্বর্বর্তী জ্ঞান ব্যাপী কুন্ডের মধ্যে পুরোহিতরা লুকিয়ে ফেলেছিলেন কিন্তু সেটিকে আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব যায়নি । মুঘল ও মুসলমান শাসনের অবসানের পর এবং হিন্দুধর্মের পুনরুজ্জীবনের স্বরূপ হিসেবে রাণী অহল্যাবাঈ হোলকারের সৌজন্যে নবনির্মিত বিশ্বনাথ মন্দিরে বিশ্বনাথের নতুন শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এই শিবলিঙ্গই আজ চুম্বকের মত দেশ ও পৃথিবীর কোণা কোণা থেকে মানুষকে বারাণসীর এই মন্দির তলে টেনে নিয়ে আসে । হাওড়া থেকে অমৃতসর মেলে বারাণসী পৌঁছেই আমরা একটি হোটেলে মালপত্র রেখে অটোরিক্সা নিয়ে চলে যাই কালভৈরব মন্দিরে । এই কালভৈরবকে বলা হয় বারাণসীর কোতোয়াল বা বডিগার্ড যিনি বারাণসীকে বাঁচিয়ে আসছেন যুগ যুগ ধরে বহির্শত্রুর আক্রমণ থেকে । সরু গলি প্রধান এই পুরোণো শহরের পেল্লায় ষাঁড় গুলি রাজকীয় । তারা স্বমহিমায় গলির আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দন্ডায়মান । শহরের ভীড়ভাট্টা, অটোরিক্সার হর্ণ, মোটরবাইকের ধাক্কাতেও তাদের কোনো হেলদোল নেই । গলি জুড়ে আর রয়েছে দর্শনার্থীদের লাইন । কোনো মতে কালভৈরবের মাথায় ফুল-বেলপাতা চড়িয়ে বেরিয়ে এসে ঘাটের দিকে রওনা দিলাম । কেদারঘাটে এসে নৌকো নিলাম । নৌকো চড়ে ওপারে রামনগর প্যালেস দেখতে যাওয়া । প্রায় এক ঘন্টা মোটর বোটে চড়ে ঘাট পেরোতে লাগলাম একে একে । কাশীর রাজা চৈত সিং নির্মিত ঘাট, প্রভুঘাট, নিরঞ্জনী ঘাট , পঞ্চকোট ঘাট, মহানির্বাণ ঘাট, হরিশচন্দ্র ঘাট, শ্রী নিষাদরাজ ঘাট, মীরঘাট ( যেখানে মীরাবাঈ স্বয়ং তপস্যা করেছিলেন ) দিগম্বর জৈন ঘাট, সুপার্শ্বনাথের জন্মভূমি প্রসিদ্ধ ; সুপার্শ্বনাথ ঘাট, আনন্দময়ী ঘাট, মাতা ভদারিণি ঘাট হিন্দী রামায়ণ রচয়িতা তুলসী দাসের নামে তুলসী ঘাট, রীবা ঘাট প্রভৃতি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘাট দেখতে দেখতে মাথায় কার্তিকের সূর্য নিয়ে গঙ্গা পরিক্রমণ করতে করতে অবশেষে পৌঁছলাম রামনগর । কার্তিক পূর্ণিমায় সব ঘাট গুলির সিঁড়িতে মাটির প্রদীপ জ্বলে একসাথে । তখন না জানি কি সুন্দর হয় ঘাটের শোভা ! গঙ্গা উত্সব পালিত হয় তখন মহাধূম করে । গঙ্গার জলে প্রদীপের আলোর সেই প্রতিফলন কি অপূর্ব আলোর জলছবি সৃষ্টি করে তা কল্পনা করে নিলাম মনে মনে । দীপাবলীর প্রাক্কালে ঘাটের সিঁড়িগুলির মেরামতি চলছিল সেই কারণে ।
রামনগর প্যালেস ও ফোর্ট
কাশীর রাজার রাজবাড়ী এবং স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর জন্মস্থান এই রামনগর । রাজবাড়ি, ফোর্ট এবং মিউজিয়ামটি ঘুরে দেখবার মত ।
অতি উপাদেয় পাওভাজি-চাট এবং লস্যি সহ দুপুরের আহার হল এখানে । লসিতে জল মেশায়না বারাণসীতে । টাটকা টক দৈ ফেটিয়ে তার মধ্যে রাবড়ি দেয় এবং ওপর থেকে খানিকটা ঘন ক্ষীর ছড়িয়ে মাটির ভাঁড়ে সার্ভ করে ।
কাশী-বিশ্বনাথ এবং অন্নপূর্ণা মন্দিরে
সন্ধ্যেবেলায় যাওয়া হল কাশীবিশ্বনাথ এবং অন্নপূর্ণা মন্দিরে পুজো দিতে । ফেরার পথে রাস্তার ধারে ফুটন্ত গরম দুধ এবং রাবড়ি খাওয়া হল । তারপর বেনারসী পান ।
সারনাথ
পরদিন সকালে অটো চড়ে সোজা সারনাথ । বুদ্ধ যেখানে প্রথম বাণী প্রচার করেছিলেন । তাই সারা বিশ্বের সকল দেশ যেমন জাপান, তিব্বত, শ্রীলঙ্কা থেকে বহু মানুষের ভীড় দেখলাম সারনাথে । পরিচ্ছন্ন শহর সারনাথ । আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার রক্ষণাবেক্ষণে সারনাথ এবং তার সংলগ্ন মিউজিয়ামটি একটি দ্রষ্টব্য স্থান ।
মণিকর্ণিকা
বেনারসে গঙ্গার তীরে অন্যতম ঘাট হল মণিকর্ণিকা এবং তার সংলগ্ন মহা শ্মশান । এখানে চিতার আগুণ কখনো নেভে না । চব্বিশ ঘন্টা জ্বলতেই থাকে । ঘাটে ঢুকেই লক্ষ্য করলাম বেল, আম প্রভৃতি গাছের শুকনো গুঁড়ি সারেসারে রাখা রয়েছে স্তুপাকারে । আর দূর থেকে ভেসে আসছে সেই শবপোড়া গন্ধ । জ্বলছে লাল চিতা । এখানে মৃত্যু হলে নাকি পরলোকযাত্রা হয় আত্মার । তাই বুঝি পূর্বে কাশীবাসী হতেন অনেকেই বৃদ্ধ বয়সে । মৃত্যু এখানে মঙ্গলময়ের চরণে ঠাঁই দেয় আত্মাকে । তাই মণিকর্ণিকা মহাশ্মশান একটী পুণ্যতীর্থ । এখানে সতীর কুন্ডল এবং মহাদেবের মণি পড়েছিল দক্ষযজ্ঞের সময় । তাই মণিকর্ণিকা একটি একান্ন পিঠের অন্যতম পিঠস্থান । সতীর অপূর্ব মন্দিরটি এখন গঙ্গার জলে অনেকটাই নিমজ্জিত । কিন্তু উপরের অংশটী এখনো দৃশ্যমান । মণিকর্ণিকার ঘাট থেকে নৌকো চড়ে দীপবলীর ভূত চতুর্দশীর রাতে মাঝ গঙ্গায় গিয়ে গঙ্গারতি দেখলাম । নৌকোয় ভাসমান হয়ে লাইভ কীর্তন-ভজন কনসার্টের সাথে আরতি দেখিনি কখনো । নৌকো থেকে গঙ্গার জলে পদ্মপাতায় ফুলের ভেলায় দীপ জ্বেলে ফুল-আলোর ছোট্ট নৌকা ভাসিয়ে মা গঙ্গার পুজো দিলাম । সারে সারে অগণিত ভক্তের ভাসানো আলোর ভেলা নিয়ে তির তির করে প্রদীপ জ্বলতে জ্বলতে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলল পুণ্যতোয়া গঙ্গার বুকে দক্ষিণ থেকে উত্তরে ।
Tuesday, October 30, 2012
গৃহনৌকা
প্রতিবার পাহাড় না সাগর এই বিতর্কে হেরে যাই আমি । গরমের ছুটির ফাঁদে পা দিলেই হিমালয় টেনে নিয়ে যায় তার কাছে । এবারেও তার ব্যতিক্রম হল না ।
আমরা তিনজনে দিল্লী থেকে আবার শ্রীনগরের উড়ানে ।
প্রিন্সলি স্টেট কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শহর শ্রীনগরে এলাম ঘুরতে ঘুরতে । এসে অবধি জ্যৈষ্ঠ্যের অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি আমাদের পথ ছাড়তে নারাজ । -->
ঝিলাম সেতু পেরিয়ে ডাল ঝিলে এলাম আমরা । একদৃষ্টে চেয়ে থাকতে হয় কিছুক্ষণ । লেক যে এত বড় হয় আগে কখনো দেখিনি ।শিলং এ বড়াপানি লেক দেখেছিলাম, সুইজারল্যান্ডের লুগানো লেক দেখেছিলাম । কিন্তু তাই বলে এত হৈ হৈ হাউসবোটের পসরা আর কূলে কূলে এত শিকারা ?
দরদস্তুর করে শিকারার মাঝির আমন্ত্রণে চড়ে বসলাম শিকারায় । এমন কাশ্মীরি নৌকোর ছবি দেখেছি । চড়িনি আগে । পড়ন্ত রোদের আলোয় ডালঝিল রমরম করছে তখন । হাউসবোটের উঠোন ঘেঁষে শিকারা চলেছে মাঝির খেয়ালে । কখনো কাশ্মীরি পশমিনার দোকানের রোয়াকে কখনো আখরোট কাঠের ওয়ার্কশপে কখনো বা মীনাকারির গয়নার শিকারার বারান্দায় । সবাই মিলে বাসছি আমরা ডাললেকের জলে । শিকারার দাঁড় কাঠের পানের গড়নের । মাঝি কি অবলীলায় না সর্বক্ষণ সে দাঁড় বাইছে আপনমনে । আমাদের নৌকার সমান্তরালে এগিয়ে এল উলের পোষাক, পাথরের গয়নার মোবাইল দোকানি । এল শুকনোফল আর কেশর । এগিয়ে এল ফোটোগ্রাফারও রাজারাজড়ার পোশাক-গয়না হাতে । একটু অনুরোধ বৈ আর কিছুই নয় । এইভাবে সেই প্রদোষে ঘন্টা দেড়েক শিকারা ভ্রমণ। মাঝে দু একটা পিটস্টপ । নেহরুগার্ডেনে অবতরণ গোলাপের বাগানে । একটু ছবি তোলা । আবার ভাসমান শিকারায় । আশপাশে ভাসমান সবজী বাগানের মধ্যে দিয়ে লিলিপুলের মধ্যে দিয়ে ।, হাউসবোটের রোয়াক ঘেঁষে । কাশ্মীরি শাল আলোয়ানের দোকানের পাশ দিয়ে একটু আধটু ছোঁক ছোঁকানি , কি কিনি কি কিনি এই ভাব নিয়ে ।
রাতের আহার সেরে হাউসবোটের ডেকে এসে ঘুমন্ত ডালঝিলকে একঝলক দেখে ঝিম ধরে গেল মাথায় । নেশাগ্রস্তের মত একদৃষ্টে চেয়ে রইলাম তার দিকে । ফুটফুটে লাল নীল সবুজ আলো জ্বলছে আশপাশের হাউসবোট থেকে আর তাদের প্রতিবিম্ব ডালঝিলের জলে দুলে বেড়াচ্ছে জলপরীদের মত, রাতপরীদের মত ।
ঘুমিয়ে পড়লাম দেবী চৌধুরাণির বজরায় । স্বপ্নে মনে পড়ে গেল চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙার কথা । এমনটিই ছিল হয়ত সে সময় । মাঝরাতে বৃষ্টি ঝরল হাউসবোটের ছাদে । কাঠের ছাদে টুপটাপ বৃষ্টিকণার শব্দ কানে লেগে রইল ।
এবার পহেলগামে দুদিন । অবন্তীপুরম, কেশর ক্ষেত, উইলো কাঠের ব্যাট, শুকনো ফলের পসরা ফেলে এবার পহেলগামের দিকে । রাস্তা দুদিকে চলে গেছে । একদিকে জম্বু যাওয়ার রাস্তা অন্যদিকে পহেলগামের পথ । ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর পথ ছাড়েনা ।
ঘোড়ায় চেপে বৈশরণ এডভেঞ্চার । তিনটে জবরদোস্ত ঘোড়া , দুই সহিস আর আমরা তিন মূর্তি । ঘন বাদামী আট বছরের বুলডোজার্, হালকা বাদামী দশ বছরের চেতক আর আমার সফেদ ঘোড়া মাত্র তিন বছরের বাদল ।
বুলডোজার জ্ঞানী বৃদ্ধ, সাবধানী এবং ভব্য সভ্য । বাদল খুব চালাক এবং দুষ্টুমিষ্টি স্বভাবের । আর চেতক হল সবচেয়ে পাজি এবং ওপরচালাক । ঘোড়ায় চেপে তো বসলাম তিনজনে ভয়েভয়ে দুই সহিস পায়ে হেঁটে আমাদের পেছন পেছনে চলল । অসমতল পাহাড়ি পথ । খানাখন্দে ভরা তায় আবার বৃষ্টি পড়ে কর্দমাক্ত । চেতক শুধু ওভারটেক করায় ব্যস্ত শুরুথেকেই । বাদল ও বুলডোজার না এগিয়ে যায় ওর থেকে । চড়াই পথে আমাদের লাগাম ধরে আমাদের নীচু হয়ে যাওয়া আর উতরাই পথে লাগাম ধরে আমাদের পিছে হেলে যাওয়া । এই নিয়ে বারবার টানাপোড়েন । তার মধ্যে মেঘের বাড়ির দরজায় পৌঁছলেই বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে কেবল । সামনে আবার নীল আকাশ, পেছনে বরফচূড়ো । কিছুটা নদীর উপত্যকা তো আবার পাহাড়ী । সবুজ মেডো, দু একটা দাঁড়কাক আবার হেলতে দুলতে চলা ঘোড়াদের মর্জিমত । কাইনমার্গ পৌঁছলাম । সবুজ মাঠ। দূষণ নেই । বৃষ্টি পড়ে আরো সবুজ লাগছে । সাজানো প্রান্তর । আচমকা এক চোরা নদী পাহাড় থেকে এঁকে বেঁকে নেমে এসে ঢুকে পড়ল পায়ের কাছে । ঘোড়া তার স্রোতে বেশ ন্যায়দম খেতে খেতে চলছে । কাদায় পা পড়লেই মনে হচ্ছে পা পিছলে যাবে ওদের । কিন্তু ওদের পায়ে নাল পরা থাকে বলে ওরা স্বচ্ছন্দ্যে অবলীলাক্রমে নদীর গতিপথে পা রেখে চলতে লাগল । ততক্ষণে আমাদের জুতো আর প্যান্টে জলকাদার প্রিণ্ট । বৈশরণ এল বুঝি । পাইনগাছের সারি দিয়ে ঘেরা সবুজ প্রান্তর । দূর দিগন্তে নীল আকাশের পৃথিবী । পৃথিবীর নীচে ঐ প্রান্তর যার নাম সুইত্জারল্যান্ড পয়েন্ট । ছবি তুলে তফাত করা যাবেনা । ভিউপয়েন্টও বটে । আল্পসের বরফচূড়ো আর হিমালয়ের বরফচূড়োয় । নো প্লাস্টিক জোন । পরিচ্ছন্ন চা-কফির ঠেক । ঘোড়া থেকে নেমে গরম চায়ে চুমুক । ননস্টপ ডিজিটাল ক্লিকে বন্দী হল ভারতের সুইস পয়েন্ট ।
চা খেয়ে ওপরে উঠে এসে আবার বাদল, বুলডোজার আর চেতকের ভরসায় চেপে বসলাম ওদের পিঠে । ওরাই আমাদের একমাত্র বল ভরসা । আবার সেই ছিটেফোঁটা বৃষ্টি, এক চিলতে রোদ্দুর মেখে পাইনবনের মধ্যে দিয়ে অন্যপথে ফেরা হোল হোটেলে ।
Saturday, September 22, 2012
জীবাশ্মে আর শ্বেতপাথরে
আমাদের টিকিট হাওড়া থেকে বিলাসপুর। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে । রাতের ট্রেন ছাড়ল ভোর সাড়ে চারটেয় । বিকেল চারটে নাগাদ বিলাসপুর পৌঁছলাম । ভাড়ার গাড়িতে উঠে এবার যাত্রা শুরু অমরকন্টকের উদ্দেশ্যে ।
দুপুর গড়িয়ে বিকেলেবেলায় আমরা তখন অমরকন্টক থেকে আরো পশ্চিমে চলেছি ন্যাশানাল হাইওয়ে ১১ ধরে জবলপুরের দিকে । ডিন্ডোরি আর শা'পুর পেরিয়ে একটি মোড় থেকে বাঁদিকে ১৪ কিমি এগিয়ে চেয়ে দেখি ঘুঘুয়া ন্যাশানাল পার্কের বিশাল গেট । ভারতবর্ষের একমাত্র ফসিল পার্ক এটি ।আমেরিকার এরিজোনার পেট্রিফায়েড ফরেস্ট ন্যাশানাল পার্কের পর পৃথিবীতে বোধহয় এটাই একমাত্র পেট্রিফায়েড ফরেস্ট যা কয়েক মিলিয়ন বছর আগে ফসিলাইজড হয়ে রকগার্ডেনে রূপান্তরিত হয়েছে । কার্বন ডেটিং পরীক্ষায় জানা যায় এই স্থানের বিশাল ট্রপিকাল চিরসবুজ বৃক্ষের জঙ্গল ছিল । যার বয়স ৬৫ মিলিয়ন । তাই এই ন্যাশানাল পার্কের প্রবেশ দ্বারে রয়েছে কংক্রীটের বিশাল ডাইনোসরাস ।
তক্ষুণি মনে হল রাজোসরাস নর্মোডেনসাসের কথা । ইন্ডিয়ান অরিজিনের এই ডাইনোসরের ফসিল তো নর্মদার তীরেই আবিষ্কৃত হয়েছিল । ভারতবর্ষ যুগে যুগে রাজারাজড়ার দেশ বলে এখানকার ডাইনোসরের নামকরণেও সেই রাজকীয়তার ছোঁয়া । কে জানে হয়ত এই ঘুঘুয়াতেই ঘুরে বেড়াতো নর্মোডেন্সাসের পরিবার ।
সরকারী কেয়ারটেকার । আমাদের ঘুরে ঘুরে সবটা পরিদর্শন করিয়েছিলেন যিনি
১৯৮৩ সালে মধ্যপ্রদেশ সরকার ঘুঘুয়াকে ন্যাশানাল পার্কের সম্মান প্রদান করে। ঘুঘুয়া এবং পার্শ্ববর্তী গ্রাম উমারিয়া নিয়ে এই ফসিল পার্কের সমগ্র ব্যাপ্তি ২৭ হেক্টর জুড়ে । এখনো অবধি ৩১ টি প্রজাতির উদ্ভিদ সনাক্ত করা গেছে । প্রধানতঃ পাম ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ এরা । ইউক্যালিপ্টাস, খেঁজুর, কলা, রুদ্রাক্ষ, জাম, এই সব ট্রপিকাল সবুজ গাছকেই চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে ।
১৯৮৩ সালে মধ্যপ্রদেশ সরকার ঘুঘুয়াকে ন্যাশানাল পার্কের সম্মান প্রদান করে। ঘুঘুয়া এবং পার্শ্ববর্তী গ্রাম উমারিয়া নিয়ে এই ফসিল পার্কের সমগ্র ব্যাপ্তি ২৭ হেক্টর জুড়ে । এখনো অবধি ৩১ টি প্রজাতির উদ্ভিদ সনাক্ত করা গেছে । প্রধানতঃ পাম ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ এরা । ইউক্যালিপ্টাস, খেঁজুর, কলা, রুদ্রাক্ষ, জাম, এই সব ট্রপিকাল সবুজ গাছকেই চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে ।
ইউক্যালিপ্টাস
সরকারী কেয়ারটেকার আমাদের নিয়ে ঘুরে ঘুরে সব দেখালেন । কিছু শামুক জাতীয় অর্থাত খোলসযুক্ত বা মোলাস্কা পর্বের প্রাণীর ফসিল দেখা গেল । এর থেকে বোঝা যায় যে স্থানটি আর্দ্র ছিল এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিও হত এখানে । তারই ফলস্বরূপ চির সবুজ বৃক্ষের সমারোহ ছিল ।
অপর্যাপ্ত ফসিলাইজড চিরসবুজ বৃক্ষের জীবাশ্মের সাক্ষী হয়ে আমরা
স্থানীয় মানুষ এই অঞ্চলকে বলে "পাত্থর কা পেড়" অর্থাত পাথরের গাছ । আমি বলব গাছ-পাথর । কথায় বলে বয়সের গাছ-পাথর নেই । তার মানে এতদিনে বুঝলাম । যে কত পুরোণো হলে গাছ পাথরে রূপান্তরিত হয় ।
স্থানীয় মানুষ এই অঞ্চলকে বলে "পাত্থর কা পেড়" অর্থাত পাথরের গাছ । আমি বলব গাছ-পাথর । কথায় বলে বয়সের গাছ-পাথর নেই । তার মানে এতদিনে বুঝলাম । যে কত পুরোণো হলে গাছ পাথরে রূপান্তরিত হয় ।
গাছ-পাথর
অমরকন্টকে এসে পৌঁছলাম বেশ রাত্তিরে । এম পি ট্যুরিসমের লাক্সারি টেন্টে থাকবার ব্যবস্থা । রাতের খাবার খেয়ে এসে বরাদ্দ তাঁবুতে সেরাতের মত আমরা আশ্রয় নিলাম ।
পরদিন ভোরে উঠে এবার আমাদের যাওয়া লাইমস্টোনের দেশে । বিখ্যাত জবলপুর মার্বেল রকস্ দেখতে । প্রথমে ভেরাঘাট । জবলপুরের ২২ কিমি দূরে নর্মদা নদী একটি গর্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এখানে । দুধসাদা পাথরের ওপর দিয়ে ঝরণার মত আছড়ে পড়ছে নর্মদা । এই গর্জটির দৈর্ঘ্য ৩ কিমি । নদীর কিনারা দিয়ে, বুকের ভাঁজে মিনারের মত সারে সারে উঠে এসেছে শ্বেতপাথরের স্তম্ভেরা । কি অপূর্ব সেই রূপ । আর নদীর উচ্ছলতায় পুরো পরিবেশটাই যেন ভিন্নস্বাদের অনুভূতি সৃষ্টি করে । ভেরাঘাট পৌঁছে কেবলকারের টিকিট কিনে রোপওয়েতে যাওয়া হল মাঝ নর্মদায় ধূঁয়াধার জলপ্রপাতের এক্কেবারে গায়ের কাছে । কেবলকারের ঘেরাটোপে ডিজিটাল ক্লিকে বন্দী হতে লাগল আমার নর্মদা । চারিদিকে যেন ফোটোশপড নীল আকাশ । আর ক্যালসিয়াম-ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেটের গাঁটছড়া । কি অপূর্ব সেই রূপ ! আর নদীর উচ্ছলতায় পুরো পরিবেশটাই যেন ভিন্নস্বাদের । পুব থেকে পশ্চিমে বহতী নর্মদা । সাদা ফেনা হয়ে জল পড়ছে গর্জের মধ্যে আর পুরো জায়গাটি ধোঁয়াময় ।
এবার পঞ্চবটী ঘাটে এসে নৌকাবিহারে বান্দরকুঁদনী । দুপাশে মার্বল রক্স এর অলিগলি রাজপথের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নর্মদা নদী । নৌকো চড়ে ঘন্টাখানেক যেন ভুলভুলাইয়ার মধ্যে ভাসমান হলাম । পাথরের কত রকমের রঙ । পরতে পরতে যেন সৃষ্টির প্রলেপ । নৌকার মাঝির স্বরচিত কবিতায় বলিউড থেকে টুজি স্ক্যাম সবই উঠে এল স্বতস্ফূর্ত ভাবে । দুপুর সূর্য্যিতখন মাথার ওপরে । আদুড় গায়ে ডাইভ মারছে স্থানীয় কিশোর নর্মদার বুকে ।
বর্ষার পর যেন আরো ঝাঁ চকচকে পাথরের রং আর নর্মদাও যেন থৈ থৈ রূপ নিয়ে খুশিতে ডগমগ । লাইমস্টোনের স্তবকে স্তবকে গাম্ভীর্য আর নদীর হাসি মিলেমিশে একাকার । কে যানে পূর্ণিমার রাতে এখানকার নিসর্গ কেমন হয় !কোজাগরীর রাতে আবার আসতে হবে এই বলে প্রণাম জানালাম মা নর্মদাকে ।
সকালবেলা, "ঘুরেআসি" সংবাদপত্রে প্রকাশিত বৃহস্পতিবার, ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০১২ তে প্রকাশিত "সৃষ্টিপাথরের উপাখ্যান" ঘুঘুয়া ফসিল ন্যাশানাল পার্ক এবং জব্বলপুর মার্বল রকস নিয়ে ভ্রমণ বৃত্তান্ত
Thursday, August 23, 2012
খড়দহ নামের উত্স
গত বছর ভাদ্রমাসে আমরা উত্তর কলকাতার খড়দহতে শ্যামসুন্দরের মন্দির এবং সংলগ্ন গঙ্গার ধারে বেড়াতে গিয়েছিলাম । মন্দিরে ভোগের ব্যাবস্থা ছিল । অসাধারণ সব নিরামিষ খাবার । প্রায় ১৪রকমের আইটেম যা ঠাকুরকে নিবেদন করা হয় । এবং দুর্দান্ত সুস্বাদু সব ভোগ । মন্দির দেখে আমরা কিছুদূরে আগরপাড়ায় আনন্দময়ী মায়ের আশ্রমে গেলাম ও সেখানে থেকে গঙ্গার এত সুন্দর রূপ দেখলাম যে তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না । অতি নির্জন ও মনোরম ঐ স্থান । খড়দহ গিয়ে জানতে পারলাম ঐ অঞ্চলের নামের ইতিকথা । নিত্যানন্দ মহাপ্রভু বিবাহের পর ঐ স্থানে আসেন ও সন্ন্যাস ত্যাগ করে গার্হস্থ জীবনযাপনের জন্য সেখানকার তদানীন্তন জমিদারের কাছ থেকে একটুকরো জমি চেয়েছিলেন । জমিদার দর্পের সঙ্গে গঙাবক্ষে একটুকরো খড় ছুঁড়ে ফেলে এবং তা দেখিয়ে নিত্যানন্দকে বলেছিলেন ঐ টুকু খড়ের ওপরে যদি বাসা বেঁধে থাকতে পারো তবে থাক । নিত্যানন্দ বলেছিলেন ‘ঠিক আছে, আমি ওইটুকু স্থানেই ঘর বাঁধব’
মহাপুরুষের কথা । যেমন বলা ওমনি কাজ । পরদিন সকালে উঠে গাঁয়ের মানুষ দেখল যে গঙ্গার ওপরে একটুকরো চর ভেসে উঠেছে এবং ঐ স্থানেই কুটির বেঁধে নিত্যানন্দ মহাপ্রভু বসবাস করতে শুরু করেন । এবং খড় ফেলার ঐ জায়গাটিতেই নদীর চর জেগে ওঠার জনশ্রুতি নিয়েই ঐ স্থানের নাম খড়দহ হয়েছে ।
Wednesday, July 4, 2012
উত্তরাখণ্ডের পথে পথে
আনন্দবাজার পত্রিকার ইন্টারনেট সংস্করণের ভ্রমণ কলম "হাওয়াবদলে" প্রকাশিত ১লা জুলাই ২০১২
Thursday, June 21, 2012
Lingaraja Temple
ফাল্গুনের একটা মিষ্টি রোদের দুপুরে খড়গপুর থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে আমরা ভুবনেশ্বরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম । ক'দিন আগেই বৃষ্টি হয়ে ঝকঝক করছে সবুজ প্রকৃতি । পাঁচঘন্টা পর ভুবনেশ্বর । পথে পেরোলাম সুবর্ণরেখা, মহানদীর ব্রিজ । এক একজায়গায় শীতের রুক্ষতায় চড়াও পড়েছে নদীর বুকে । হোটেলে গিয়ে উঠলাম । সেখানে থেকে পরদিন ভোরে একটা অটোরিক্সো ভাড়া করে লিঙ্গরাজা মন্দির । মন্দিরময় ভুবনেশ্বরে এটি একটি অন্যতম বৃহত মন্দির । কলিঙ্গ স্থাপত্যে একে পঞ্চরথের আদল বলা হয় । ১১ th century তে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন সোমবংশীয় রাজা জজাতি কেশরী । ভুবনেশ্বরের সবচেয়ে বড় মন্দির এটি । ল্যাটেরাইট পাথরের প্রাচীর বেষ্টিত এই বিশাল মন্দিরের চত্বরটি দেখলে মনে হয় বহির্শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য এত উঁচু এবং প্রশস্ত প্রাচীর দিয়ে একে ঘিরে রাখা হয়েছিল । প্রবেশদ্বারটিও বেশ রাজকীয় । পিতলের কারুকার্যময় দরজা । তবে ক্যামেরা, জুতো এবং সেলফোন নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ । এ যুগেও এত রক্ষণশীলতার কারণ বুঝে উঠতে পারলামনা । কিন্তু এত সত্ত্বেও লিঙ্গরাজাকে দর্শন করতে গিয়ে দেখি আসল মহালিঙ্গটিই কালের স্রোতে বিদ্বেষে, রোষে আক্রমণে রক্ষা করতে পারেনি তারা । ঐ স্বয়ংভূ বা মাটি থেকে আপনিই উঠে আসা রাজলিঙ্গকে হরি-হর জ্ঞানে পূজা করা হয় । একদিকে যা বৈষ্ণব এবং শৈব ধর্মের মেলবন্ধন ঘটায় । শিব এখানে পূজিত হন ত্রিভুবনেশ্বর বা স্বর্গ, মর্ত্য এবং পাতালের প্রভু রূপে । ভুবনেশ্বরী দেবী হলেন এই শিবের প্রকৃতি । তাঁর মন্দির ও রয়েছে পাশে । মূল মন্দিরটি ৫৫মিটার উঁচু এবং ঐ বিশাল মন্দিরের চত্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আরো আরো ১৫০টি ছোট বড় অমন মন্দির । ঘুরে ঘুরে দেখলাম বেশ কয়েকটি । প্রবেশদ্বারে ঢুকেই বাঁদিকে গণেশ মন্দির । তারপর মূলমন্দিরে পুজো দিলাম দুধ, বেলপাতা ধুতুরা ফুল দিয়ে । বাইরে এসে দীপ জ্বালালাম মহাদেবকে স্মরণ করে । ঊড়িষ্যার কোনো মন্দিরে দর্শনার্থীরা লিঙ্গের মাথায় জল, ফুল বা দুধ চড়াতে পারেনা ।একদল পান্ডাদের স্বেচ্ছাচারিতা, অহমিকা আর ট্যুরিষ্ট বিদ্বেষ জায়গাটির স্থান মাহাত্ম্যকে কিছুটা ম্লান করে দিয়েছে । যারাই আসছেন দূর দূর থেকে সকলের মুখেই সেই এককথা । লিঙ্গরাজ যেন ঐ প্রদেশের পূজারী এবং সেবায়েতদেরই সম্পত্তি । উত্তর বা পূর্ব ভারতের আর কোথাও এমনটি খুঁজে পাইনি । ভূবনেশ্বরী, কালী, সাবিত্রী, যমরাজ ইত্যাদি কয়েকটি মন্দিরে প্রবেশ করলাম ।
ল্যাটেরাইট পাথরের খোদাই করা স্থাপত্য সত্যি সত্যি অভিনব । নিখুঁত হস্তশৈলী । ১১০০ বছরের পুরোণো এই মন্দির গাত্রের কাজ পার করে দিয়েছে কত ধর্মবৈষম্যের ঝড়ঝাপটা , কত বর্ণ বিদ্বেষের কোলাহল তবুও আজ স্বমহিমায় টিকে রয়ে গেছেন লিঙ্গরাজা । কিছুদূরেই রয়েছে বিন্দুসাগর এবং তার লাগোয়া ১৫ th century তে গজপতি রাজাদের তৈরী ব্রহ্মরাজ মন্দির । বৈশাখী পূর্ণিমায় লিঙ্গরাজ এখানে আসেন হাওয়া বদল করতে ঠিক যেমন পুরীর জগন্নাথ রথযাত্রায় মাসীর বাড়ি যান । আরো খানিক গেলেই পড়বে 9th century তে নির্মিত রামেশ্বর মন্দির । কলিঙ্গ স্থাপত্যের ছোঁয়া এখানেও । কিছুটা লিঙ্গরাজ মন্দিরের আদলে তৈরী । রামচন্দ্র নাকি লঙ্কা বিজয়ের পর বিজয়রথ নিয়ে সীতার সাথে এখানে আসেন এবং এই শিবলিঙ্গটি প্রতিষ্ঠা করেন । বাসন্তীপূজার সময় অশোক-অষ্টমী তিথিতে, রামনবমীর আগের দিন লিঙ্গরাজ বিশাল "রুকুনা" রথে আরোহণ করে এই রামেশ্বর মন্দিরে আসেন চারদিনের জন্য । আর কিম্বদন্তী বলে এই চৈত্রমাসের বাসন্তীপূজার সময়ই তো রামচন্দ্র অকালবোধন করেছিলেন । ঐ চারদিন ধরেই তো বাসন্তী পুজো হয়ে আসছে দুর্গাপুজোর আদলে ।
ল্যাটেরাইট পাথরের খোদাই করা স্থাপত্য সত্যি সত্যি অভিনব । নিখুঁত হস্তশৈলী । ১১০০ বছরের পুরোণো এই মন্দির গাত্রের কাজ পার করে দিয়েছে কত ধর্মবৈষম্যের ঝড়ঝাপটা , কত বর্ণ বিদ্বেষের কোলাহল তবুও আজ স্বমহিমায় টিকে রয়ে গেছেন লিঙ্গরাজা । কিছুদূরেই রয়েছে বিন্দুসাগর এবং তার লাগোয়া ১৫ th century তে গজপতি রাজাদের তৈরী ব্রহ্মরাজ মন্দির । বৈশাখী পূর্ণিমায় লিঙ্গরাজ এখানে আসেন হাওয়া বদল করতে ঠিক যেমন পুরীর জগন্নাথ রথযাত্রায় মাসীর বাড়ি যান । আরো খানিক গেলেই পড়বে 9th century তে নির্মিত রামেশ্বর মন্দির । কলিঙ্গ স্থাপত্যের ছোঁয়া এখানেও । কিছুটা লিঙ্গরাজ মন্দিরের আদলে তৈরী । রামচন্দ্র নাকি লঙ্কা বিজয়ের পর বিজয়রথ নিয়ে সীতার সাথে এখানে আসেন এবং এই শিবলিঙ্গটি প্রতিষ্ঠা করেন । বাসন্তীপূজার সময় অশোক-অষ্টমী তিথিতে, রামনবমীর আগের দিন লিঙ্গরাজ বিশাল "রুকুনা" রথে আরোহণ করে এই রামেশ্বর মন্দিরে আসেন চারদিনের জন্য । আর কিম্বদন্তী বলে এই চৈত্রমাসের বাসন্তীপূজার সময়ই তো রামচন্দ্র অকালবোধন করেছিলেন । ঐ চারদিন ধরেই তো বাসন্তী পুজো হয়ে আসছে দুর্গাপুজোর আদলে ।
Monday, June 11, 2012
বিপন্ন বাঁশবেড়িয়ায়
কোলকাতা ছেড়ে আমরা তখন বিটি রোড ধরেছি । হুগলীর বাঁশবেড়িয়ায় আমার শ্বশুরমশাইয়ের পিতামহ শ্রী সত্যচরণ মুখোপাধ্যায়ের তৈরী বসতভিটে পরিদর্শনে । একে একে পেরোলাম বালি, উত্তরপাড়া, কোন্নগর, ভদ্রকালী, রিষঢ়া, শ্রীরামপুর পেরোতে পেরোতে জৈষ্ঠ্যের রোদ তখন প্রায় আলম্ব মাথার ওপর । তারমধ্যেই শহরতলীর বাজারে হৈ হৈ করে বিকোচ্ছে আম-কাঁঠাল-লিচু । রবিবারের সরগরম বাজারে ঠা ঠা রোদেও বিকিকিনির খামতি নেই ।
জিটি রোড ছেড়ে এবার পুরোণো দিল্লী রোড ধরে সোজা মগরা হয়ে বাঁশবেড়িয়া । হংসেশ্বরী রোড ধরে রঘুদেবপুরে থামা ।
দেড়শো বছরের পুরোণো মুখুজ্যে বাস্তুভিটে এখন জঙ্গলাকীর্ণ । লোকাল ক্লাব, লোকনাথ বাবার মন্দির গড়ে উঠেছে এই জমিতেই ।
দোতলাবাড়ি ভেঙে গেছে বহুদিন আগেই ।জানলা দরজা ভেঙে ভেঙে নিয়ে গেছে কেউ । কড়িবরগার ছাদের নীচে একতলায় বাস করছে তিনটি পরিবার । পাশে দুটো পুকুরে এখনো জল থৈ থৈ । সংলগ্ন বাড়ি উঠেছে আমাদের জমির ওপর দিয়েই । প্রকান্ড বাড়ির সামনে বারমহল এখনো কিছুটা ভগ্নাবস্থায় দাঁড়িয়ে । পাশে ছিল উঁচু করা খানিক জমি যেখানে প্রতিবছর জগাদ্ধাত্রী পুজো হত ।
এখন পরিত্যক্ত ভিটের কুলুঙ্গিতে চামচিকের আনাগোনা । ক্লান্ত দুপুরে এ ভিটে হয়ে ওঠে নিঃসঙ্গ কুবো-ঘুঘুদের ছায়াসাথী । পোড়া ইঁটের সুরকি নিয়ে রান্নাবাটি জমিয়ে দেয় পাড়ার ছোট ছেলেমেয়েরা । বারমহলের লবি চু-কিত্কিত প্রেমীদের অবারিত দ্বার ।
এরপর যাওয়া হল হংসেশ্বরী মন্দির ।
পুরোণো হুগলীজেলার শিল্পনগরী ব্যান্ডেল এবং ত্রিবেণীর মাঝামাঝি অবস্থিত হংসেশ্বরী মন্দির । রাজা নৃসিংহদেব রায় এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীকালে ওনার বিধবা পত্নী রাণী শংকরী সেই কাজ সমাপ্ত করেন । হংসেশ্বরী মন্দিরের অদ্ভূত গড়ন । বাংলার অন্যান্য মন্দিরের থেকে ভিন্নরকমের । পঞ্চতল এই মন্দিরে তেরোটি উঁচু মিনার আছে যাকে বলে রত্ন । প্রতিটি মিনার যেন এক একটি প্রস্ফুটিত পদ্মের আকৃতিতে তৈরী । হংসেশ্বরী মন্দিরের গঠনশৈলীকে বলা হয় তান্ত্রিক সাতচক্রভেদ ।
পাশেই অনন্ত বাসুদেবের মন্দিরটি ও নজর কাড়ে । সেটি বাংলার চালাঘরের আদতে পোড়ামাটির তৈরী । গায়ে টেরাকোটার অভিনব স্থাপত্য ।নিঁখুত কারুকার্য এই টেরাকোটার । কোনোটিতে রাধাকৃষ্ণ, কোনোটিতে দশাবতার, কোনোটিতে হনুমান ।
এই দুই মন্দিরই এখন আরকিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অধীনে ।কাছেই ত্রিবেণী হল তিন নদী গঙ্গা, সরস্বতী ও বিদ্যাধরীর সঙ্গমস্থল । কিন্তু সরস্বতী নদী মজে যাওয়ায় দুটি নদী এখন দৃশ্যমান ।
মন্দির এবং সংলগ্ন জমিদার বাড়ীর পুরো চৌহর্দির সীমানা বরাবর পরিখা খনন করে সুরক্ষিত করা রয়েছে এখনো ।
Wednesday, May 30, 2012
কাশ্মীরে
-->
কাশ্মীরে
17th May 2012
প্রতিবার পাহাড় না সাগর এই বিতর্কে হেরে যাই আমি । গরমের ছুটির ফাঁদে পা দিলেই হিমালয় টেনে নিয়ে যায় তার কাছে । এবারেও তার ব্যতিক্রম হল না । গ্রীষ্মের ভোরের অতিবেগুনী রশ্মির মশারী ছিঁড়েখুঁড়ে আমরা তখন মহানগরকে নীচে ফেলে হারিয়ে গেলাম বায়ুপথে । ততক্ষণে ভুলে গেছি প্রখর তপন তাপ । উধাও গ্রীষ্মের দাপুটে মেজাজ । আমরা তিনজনে দিল্লী থেকে আবার শ্রীনগরের উড়ানে । আমার চোখে কাশ্মীর কি কলির সিনেমেটিক রং ... দুচোখ জুড়ে শাম্মী কাপুর আর শর্মিলা ঠাকুর ভাসছে । ধীরে ধীরে হিমালয়ের টানে, বরফের গানে এগিয়ে চলেছি । আমার দেশের রূপলাবণ্য নিয়ে সর্বাগ্রে যে মুখশ্রীর কথা বলতে হয় সেই কাশ্মীর পৌঁছলাম শ্রীনগর থেকে একখানা গাড়িতে করে । এই সেই বিদ্ধস্ত terrain যাকে ছিনিয়ে নেবার জন্যে এত দাঙ্গা হয়েছে ? দেশের এই মুখশ্রীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে বর্ডারে কত কাঁটাতারের বেড়া , কত সৈনিকের লড়াই ! কত টানাপোড়েন ! এই ভূস্বর্গকে তুলনা করা হয় ইউরোপের সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে । কয়েকদিনের জন্যে না হয় তোলা থাক সে তুলনা । সুইস আলপ্সের স্মৃতি তোলা থাক এলবামে । ওরে হিমালয় যে আলপ্সের চেয়ে কিছু কম নয় ...এই বলতে বলতে এগিয়ে চললাম ফোটোশপড নীল আকাশের দেশে । এমন নীল যে কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি! এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি চলল হৃদয়পুরা দিয়ে । ঝাউগাছ আর লতানে গোলাপের গুল্মের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে বারবার মনে পড়ছিল ওপি নায়ারের কাশ্মীর কি কলির গানের সিকোয়েন্স । স্লোপিং রুফের বাড়িগুলো দেখে মনে পড়ে গেল খবরের কাগজের তুষারপাতের কথা । পথে চাপদাড়ি যুবক, বোরখা ঢাকা যুবতী আর মোড়ে মোড়ে সিআর পিএফ জওয়ানদের ভ্যান গাড়ি দেখে অনুভব করলাম কাশ্মীরের প্রতিকূলতা । পথে পড়ল রাজবাগ পার্ক । ঝিলামকে দেখলাম একঝলক । একে বলে বিতস্তা । ড্রাইভার মুক্তেয়ার বলল "দরিয়া ঝালেম" । যার পেছনে ঘন সবুজ পাহাড় স্তরে স্তরে সাজানো । ঝিলাম নেমেছে হিমালয়ের কোনো এক চোরা গ্লেসিয়ার থেকে । বেশ ঢল ঢল থৈ থৈ নিটোল রূপ তার । ঝিলাম সেতু পেরিয়ে ডাল ঝিলে এলাম আমরা । একদৃষ্টে চেয়ে থাকতে হয় কিছুক্ষণ । লেক যে এত বড় হয় আগে কখনো দেখিনি ।শিলং এ বড়াপানি লেক দেখেছিলাম, সুইজারল্যান্ডের লুগানো লেক দেখেছিলাম । কিন্তু তাই বলে এত হৈ হৈ হাউসবোটের পসরা আর কূলে কূলে এত শিকারা ?
ডাললেকের ধারে একটা হোটেলে আমাদের সেদিনের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা । মালপত্র রেখে একটু চা-স্ন্যাক্স খেয়েই আমরা পায়ে হেঁটে ডাল-ঝিল পরিক্রমায় বেরোলাম । দরদস্তুর করে শিকারার মাঝির আমন্ত্রণে চড়ে বসলাম শিকারায় । এমন কাশ্মীরি নৌকোর ছবি দেখেছি । চড়িনি আগে । পড়ন্ত রোদের আলোয় ডালঝিল রমরম করছে তখন । হাউসবোটের উঠোন ঘেঁষে শিকারা চলেছে মাঝির খেয়ালে । কখনো কাশ্মীরি পশমিনার দোকানের রোয়াকে কখনো আখরোট কাঠের ওয়ার্কশপে কখনো বা মীনাকারির গয়নার শিকারার বারান্দায় । সবাই মিলে বাসছি আমরা ডাললেকের জলে । শিকারার দাঁড় কাঠের পানের গড়নের । মাঝি কি অবলীলায় না সর্বক্ষণ সে দাঁড় বাইছে আপনমনে । আমাদের নৌকার সমান্তরালে এগিয়ে এল উলের পোষাক, পাথরের গয়নার মোবাইল দোকানি । এল শুকনোফল আর কেশর । এগিয়ে এল ফোটোগ্রাফারও রাজারাজড়ার পোশাক-গয়না হাতে । একটু অনুরোধ বৈ আর কিছুই নয় । এইভাবে সেই প্রদোষে ঘন্টা দেড়েক শিকারা ভ্রমণ। মাঝে দু একটা পিটস্টপ । নেহরুগার্ডেনে অবতরণ গোলাপের বাগানে । একটু ছবি তোলা । আবার শিকারা চড়ে ভাসমান শিকারায় । আশপাশে ভাসমান সবজী বাগানের মধ্যে দিয়ে লিলিপুলের মধ্যে দিয়ে ।, হাউসবোটের রোয়াক ঘেঁষে । কাশ্মীরি শাল আলোয়ানের দোকানের পাশ দিয়ে একটু আধটু ছোঁক ছোঁকানি , কি কিনি কি কিনি এই ভাব নিয়ে । ডাললেকের ধারে একটা ধাবায় রাতের খাওয়া সারা হল রুটি আর মুরগীর রোগানজোশ দিয়ে । বেশ সুস্বাদু রান্না । তেল কম , মশলা বেশি । বেশ অন্যরকম স্বাদ । রাতে হোটেলে ফিরে সুখনিদ্রায় ডুবসাগরে ।
১৮ই মে ২০১২
শ্রীনগরের ডাললেকের ধারে হোটেলের কামরা থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শব্দে ঘুম গেল ভেঙে । মেঘ না মৌসুমী ? কাঁচের জানলায় অন্ধকারের থাবা । ভূস্বর্গ বৃষ্টিস্বর্গে পৌঁছে গেল না কি ! মনখারাপের পার্টির শুরু । জানলার ভারী পর্দা সরিয়ে দেখি কালো মেঘে আকাশ ঢেকে গেছে । প্রথমে টুথব্রাশ তারপর চায়ের কাপ হাতে আমি চোখ রেখেছি পাহাড়ের মাথায় । কখনো মেঘ উড়ে গেলে তুষারশিখর মুখ বেরে করছে আবার মেঘের চাদর তার গায়ে । আমাদের মনের চাপা টেনশনে ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে ততক্ষণে । রুম হিটার বন্ধ করলাম । হঠাত চানঘর থেকে এসে দেখি রোদ উঠেছে । পাহাড়ের চূড়ো হাসতে শুরু করেছে খিলখিল করে । সবজী পরোটা আর দৈ সহযোগে ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়া হল পহেলগামের উদ্দেশ্যে । হালকা ঠান্ডা তখন চিনার বনের মধ্যে । ঝিলামের ধারে ধারে চিনারের এই অভিভাবকত্ব মুঘল আমল থেকে । চিনারকে কেউ কুড়ুল মারতে পারবেনা । এই ইকোফ্রেন্ডলি চিনারকে নিয়ে কাশ্মীরিদের খুব গর্ব । পাঁচ;ছ'শো বছরের পুরোণো চিনারের গাম্ভীর্যে কাশ্মীরের রাস্তাগুলো যেন আরো সুন্দর হয়ে উঠেছে সবুজে সবুজে । চিনার পাতা সর্বস্ব বৃক্ষ । পরিবেশ দূষণ রুখতে এর জুড়ি নেই । আর আছে এর ভেষজ গুণ ।চিনারের ছায়ায় টিবি রোগ সারে । প্রচুর পাতা থাকায় অক্সিজেন সাপ্লাই করে পরিবেশ দূষণ রুখতে এর জুড়ি মেলা ভার । স্থানীয় মানুষেরা পারলে চিনারকে পুজো করে । চলেছি চিনার বনের মধ্যে দিয়ে কেশর ক্ষেতে । জাফরাণী মাদকতা নিয়ে । দুষ্প্রাপ্য এই কেশরকে খুব যত্নে চাষ করা হয় । বছরের অল্প সময়ে অস্তিত্ত্ব । তার মধ্যেই ফুল ফুটিয়ে ফুল শুকিয়ে বাক্সবন্দী হয় এই সুগন্ধী ।
পথে পড়ল পান্থচক । পাথরের সব কারখানা । কারিগরেরা সেখানে খুদে খুদে বানাচ্ছে শিল নোড়া, খলনুড়ি, হামান দিস্তা । কিনে ফেললাম একটা খলনুড়ি । বেশ অন্যরকম দেখতে । এটাই কাশ্মীরের ট্র্যাডিশানাল মশলা পেষার কল ।
এবার আখরোট গাছ । ড্রাইভারের প্রশ্রয়ে এক শুকনোফলের দোকানে থামলাম । জাফরাণী পাঁচন কাওয়া দিয়ে ওয়েলকাম পর্ব । পাঁচন যে এত সুখকর পানীয় হতে পারে তা প্রমাণ করল অনবদ্য এই কাওয়া ড্রিংক । পেস্তা, আমন্ড কুচি দিয়ে গার্ণিশ করা কেশর-এলাচের গন্ধে ম ম করছে আশপাশ । ওয়েলকাম পর্ব সেরে শুভেচ্ছা বিনিময় তারপর চোখরাখা হল শুকনো ফলের পসরায় । আখরোট, মনাক্কা, আমন্ড, পেস্তা, কাজু, কিশমিশ , ফিগ ও পোস্ত । আখরোটই একমাত্র স্থানীয় ফল । কিছুটা খরিদারি হল । এবার পথচলা ।
এবার দেখি উইলোকাঠের সারি । ক্রিকেট ব্যাট তৈরী হয় এই কাঠ দিয়ে । প্রচুর ট্যুরিস্ট গাড়ি থামিয়ে বাক্সবন্দী করছে ক্রিকেট ব্যাট । এবার এল অবন্তীপুরম । কাশ্মীরের রাজা অবন্তী বর্মণের তৈরী ১১০০ বছরের পুরোণো এই মন্দির । দুধর্ষ সুন্দর । ৯০০ শতাব্দীতে নির্মিত । তারপর ৫০০ বছর পর ভূমিকম্পে ওলটপালট মন্দিরের স্থাপত্য । ঝিলামের স্রোতে ভেসে গেছে খুঁটিনাটি । ঝিলামের ঢেউ আছড়ে পড়েছে ভাঙা মন্দিরের কালো পাথরের উঠোনে । তলিয়ে গেছে ইতিহাস । সাক্ষী শুধু কাশ্মীরের পথ । চাপা পড়ে যাওয়া সময়ের দলিলে চোখ রাখলাম লোকাল গাইডের সাথে । ভূকম্পনে বিদ্ধস্ত এই মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করেছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদ দয়ানন্দ সরস্বতী । ১৯২৩ সালে তখন ব্রিটিশ আমল । মন্দিরের চারপাশে পাথরের চারটি অভিনব সরস্বতী। এছাড়া রয়েছে লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক । মধ্যিখানে উঁচু মঞ্চে রূপোর বিষ্ণু মন্দির ছিল । ব্রিটিশরা সেই রূপোর মূর্তি লন্ডনের মিউজিয়ামে নিয়ে চলে যায় । পাথরের অন্যান্য মূর্তিগুলি শ্রীনগরের মিউজিয়ামে সংরক্ষিত । চিনারের ছায়ায় ঘুরে ঘুরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে পাথরের খোদাই কর্ম খুঁজে বের করে দেখালেন গাইড বন্ধু । বিষ্ণুর অনন্ত শয্যা শেষ নাগের ওপর, নবগ্রহের মূর্তি, লক্ষ্মী নারায়ণ আরো কত কিছু ।
--> পথে পড়ল পান্থচক । পাথরের সব কারখানা । কারিগরেরা সেখানে খুদে খুদে বানাচ্ছে শিল নোড়া, খলনুড়ি, হামান দিস্তা । কিনে ফেললাম একটা খলনুড়ি । বেশ অন্যরকম দেখতে । এটাই কাশ্মীরের ট্র্যাডিশানাল মশলা পেষার কল ।
এবার আখরোট গাছ । ড্রাইভারের প্রশ্রয়ে এক শুকনোফলের দোকানে থামলাম । জাফরাণী পাঁচন কাওয়া দিয়ে ওয়েলকাম পর্ব । পাঁচন যে এত সুখকর পানীয় হতে পারে তা প্রমাণ করল অনবদ্য এই কাওয়া ড্রিংক । পেস্তা, আমন্ড কুচি দিয়ে গার্ণিশ করা কেশর-এলাচের গন্ধে ম ম করছে আশপাশ । ওয়েলকাম পর্ব সেরে শুভেচ্ছা বিনিময় তারপর চোখরাখা হল শুকনো ফলের পসরায় । আখরোট, মনাক্কা, আমন্ড, পেস্তা, কাজু, কিশমিশ , ফিগ ও পোস্ত । আখরোটই একমাত্র স্থানীয় ফল । কিছুটা খরিদারি হল । এবার পথচলা ।
এবার দেখি উইলোকাঠের সারি । ক্রিকেট ব্যাট তৈরী হয় এই কাঠ দিয়ে । প্রচুর ট্যুরিস্ট গাড়ি থামিয়ে বাক্সবন্দী করছে ক্রিকেট ব্যাট । এবার এল অবন্তীপুরম । কাশ্মীরের রাজা অবন্তী বর্মণের তৈরী ১১০০ বছরের পুরোণো এই মন্দির । দুধর্ষ সুন্দর । ৯০০ শতাব্দীতে নির্মিত । তারপর ৫০০ বছর পর ভূমিকম্পে ওলটপালট মন্দিরের স্থাপত্য । ঝিলামের স্রোতে ভেসে গেছে খুঁটিনাটি । ঝিলামের ঢেউ আছড়ে পড়েছে ভাঙা মন্দিরের কালো পাথরের উঠোনে । তলিয়ে গেছে ইতিহাস । সাক্ষী শুধু কাশ্মীরের পথ । চাপা পড়ে যাওয়া সময়ের দলিলে চোখ রাখলাম লোকাল গাইডের সাথে । ভূকম্পনে বিদ্ধস্ত এই মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করেছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদ দয়ানন্দ সরস্বতী । ১৯২৩ সালে তখন ব্রিটিশ আমল । মন্দিরের চারপাশে পাথরের চারটি অভিনব সরস্বতী। এছাড়া রয়েছে লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক । মধ্যিখানে উঁচু মঞ্চে রূপোর বিষ্ণু মন্দির ছিল । ব্রিটিশরা সেই রূপোর মূর্তি লন্ডনের মিউজিয়ামে নিয়ে চলে যায় । পাথরের অন্যান্য মূর্তিগুলি শ্রীনগরের মিউজিয়ামে সংরক্ষিত । চিনারের ছায়ায় ঘুরে ঘুরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে পাথরের খোদাই কর্ম খুঁজে বের করে দেখালেন গাইড বন্ধু । বিষ্ণুর অনন্ত শয্যা শেষ নাগের ওপর, নবগ্রহের মূর্তি, লক্ষ্মী নারায়ণ আরো কত কিছু ।
Sunday, March 18, 2012
Chandidas
নানুর চন্ডীদাসের পিতামহের বাস্তুভিটে । অভাবের তাড়নায় কিছুকাল বাঁকুড়া জেলার ছাতনা গ্রামে বাস করেন তিনি । স্ত্রী পদ্মজা তাঁকে ছেড়ে নানুরের অদূরে কীর্ণাহার গ্রামে পিত্রালয়ে চলে যান । চন্ডীদাসও তখন গৃহত্যাগ করে পদ লিখে কথকতা করে বেড়ান । মাধুকরী হয় তাঁর উপজীবিকা । দিনের শেষে স্বপাকে ফুটিয়ে নেন ভিক্ষার অন্ন । এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন রাজ দরবারে নিজের ভুর্জ্যপত্রের পুঁথিখানি খুলে বিনা প্রস্তুতিতে ঝুমর গান শুনিয়ে রাজাকে তৃপ্ত করেন । আর তখনি রাজা নানুরের বাসলী দেবীর মন্দিরে পৌরোহিত্য করার ভার দেন তাঁকে । মন প্রাণ এক করে চন্ডীদাস তখন শ্রীকৃষ্ণকথার পর পর পর্বগুলির পদ আওড়ান মনেমনে আর সাথে সাথে লিখে ফেলতে থাকেন । আশ্রয় পান মন্দির সংলগ্ন ছোট্ট একটি ঘরে । এ যাবতকাল পদরচনায় যে ভাটা পড়েছিল রাজার অনুগ্রহে আশ্রয় এবং অন্নের চিন্তা করতে না হওয়ার কারণে তাঁর কাব্যচর্চার পরিস্ফূরণ হতে লাগল । একদিন ঘোর অমাবস্যাতিথির করাল অন্ধকারে স্বপ্নাদেশ পেলেন বাসলীদেবীর কাছ থেকে । তারপর তুলে নিলেন বহুদিনের অব্যবহৃত কর্ণিকাখানি । একটুকরো ভুর্জ্যপত্র প্রদীপের আলোয় ধরে পদ লিখতে শুরু করলেন । সেইথেকে আবার শুরু হয়ে যায় কাব্যচর্চা ।এখন বাসলীদেবীর মুখ মনে পড়লেই তাঁর মনে পড়ে যায় সেই রজকিনী রামীর মুখ । যেন অবিকল এক মুখশ্রী! রজকিনী রামী বাশলী মন্দিরের দেবদাসী । অপূর্ব মুখাবয়ব, বিদ্যুতলতার মত তনুশ্রী তার । কুয়ো থেকে প্রতিদিন সকালে জল তুলে মন্দির ঝাঁট দেয় সে । ঠাকুরের বাসনকোসন ঝকঝকে করে মাজে । মন্দিরের ভোগ নিতে এসেছিল একবেলায় । তখনই চন্ডীদাসের সাথে আলাপ হয় তার । নানুরের অদূরে তেহাই গ্রামে সেই রজকতনয়ার বাস । পিতৃমাতৃহীনা এই রামিণির প্রতি সেই থেকেই ভালোলাগা এবং তার পরিণতি সার্থক প্রেমে। আশ মেটেনা রামীকে দেখে । এত রূপ এত যৌবন তার কিন্তু করেম কখনো অনীহা নেই । হাসিমুখে কাজ করে মেয়েটা । ভোরের পুবের আলোতে রামীর রূপ একরকম । চাঁদের জ্যোত্স্নায় তাকে দেখলে সর্বাঙ্গ অবশ করা এক অনুভূতি হয় । অমাবস্যার অন্ধকারে সেই নারীমূর্তি যেন আচ্ছন্ন করে রাখে চন্ডীদাসকে । রামিনির যেন কৃষ্ণকলি । কালোমেয়ের এতরূপ! কাজলকালো আঁখি, নিটোল গড়নপেটন । আর চেহারায় যেন কি একটা যাদু আছে । চন্ডীদাস দিনে দিনে ক্রমশঃ উপলব্ধি করেন রামিনির এই রূপ রহস্য । এই মেয়েকে দেবীমূর্তির মত মনে হয় তাঁর ।
কখনো এই নারীমূর্তিকে তাঁর মনে হয় তাঁর বৈষ্ণব কাব্যের শ্রীরাধিকা আবার কখনো তাকে মনে হয় বাঁশুলি দেবীর প্রতিমূর্তি । একদিন রাতে স্বপ্ন দেখেন চন্ডীদাস । তীব্র কামপিপাসা জাগে শরীরে । স্ত্রী পদ্মজাকে কিছুই দিতে পারেননি তিনি । মনের দুঃখে চলে গেছে সে । বহুদিন নারীসঙ্গ বিবর্জিত একঘেয়ে জীবন তাঁর । অথচ পূর্ণ যৌবন তাকে এখনো ছেড়ে যায়নি । পদ্মজা রূপবতীও ছিলনা । তবুও তো সতীলক্ষ্মী ছিল । কিন্তু আজ তাঁর স্বপ্নে একবার আসেন রামী একবার অসেন দেবী বাঁশুলির মুখাবয়ব । কেন এমন হয়? হৃদয়ের একুল ওকুল সব উথালপাথাল । ভোর হতেই ঝাঁটা হাতে রামিণীকে দেখেই বোবার মত হতভম্ভ হয়ে যান কবি । রজকিনিকে বলেন কাছে আসতে । যেন রামির রাই-অঙ্গের ছটা লেগে শ্যাম আজ পুলকিত, বিস্মিত, শিহরিত ! দুহাত বাড়িয়ে রামীর আলগা বাহুকে ছুঁয়ে আলিঙ্গন করতে গেলেন । রজকিনী বলে উঠলেন " ও মা, ছি ছি, এ কি গোঁসাই? একি করছেন আপনি? আজ থেকে এই মন্দিরের সব অধিকার তোমায় দিলাম । তুমি বাসলীদেবীর বেদীস্পর্শের, দেবীবিগ্রহকে ছোঁবার, ভোগ নিবেদন করার সব অধিকার তোমার । কুন্ঠিত, লজ্জিত রামিণি মনে মনে ভাবলেন নীচুজাতের মেয়ে হয়ে আমার এ কি সৌভাগ্য হল ঠাকুর ? পাড়ার লোকে যদি একঘরে করে দেয় তার গোঁসাইকে । সে পড়ল দোটানায় । পুরুষের চোখে যে কামের আগুন জ্বলতে দেখেছে সে তাকে প্রকৃত ভালোবাসবে তো ? না কি কেবল তাঁর শরীরের আকর্ষণেই বারবার তার কাছে আসছে, প্রেমনিবেদন করতে ।
এই দোলাচলে সে বলেই ফেলল " না সে হয়না গোঁসাই । লোকলজ্জাকে আমি ভয় পাই । যেদিন তুমি আমাকে সত্যি সত্যি নিজের করে ভালোবাসবে সেই দিন এই শরীর আমি তোমায় দেব । আরো লেখ তুমি কবি । মনসংযোগ করো লেখায় । বয়স চলে গেলে এত সুন্দর পদ রচনায় ভাটা পড়বে । কাব্যের স্বতস্ফূরণ আর তখন হয়ত ঘটবেনা ।
চন্ডীদাস মনে মনে বুঝলেন "এ বাসলীদেবীরই ছলাকলা । আরো ডাকতে হবে তাকে । আরো রচনা করতে হবে পদ । তবেই দেবী তার একান্ত আপনার হবে"
এদিকে মনের সুখে চন্ডীদাস পদরচনা করে চলেছেন । অবসরে রামীর সাথে দুষ্টুমিষ্টি খুনসুটি, ভালোবাসার দীপাবলি জ্বলছে তখন রামীর মনে । চন্ডীদাসের কুঁড়ে সেই আলোয় সেজে উঠেছে । পুরুষপ্রকৃতি একজোটে সৃষ্টিসুখে রাধাকৃষ্ণ পদলীলায় মেতে উঠেছে ।
এদিকে কাব্যের পান্ডুলিপি জমা পড়ে গেছে অনেকদিন ছাতনার রাজা হামিরের কাছে । কিন্তু রাজার তরফ থেকে কোনো উচ্চবাচ্য নেই । আর চন্ডীদাসের কাছে না আছে সেই পান্ডুলিপির প্রতিলিপি না আছে কোনো যোগাযোগের মাধ্যম । স্বয়ং রাজদরবারে উপস্থিত হয়ে রাজার কাছ থেকে জেনে আসতে মানে লাগে তাঁর । অথচ রাজা ফেরত পাঠিয়েও দেননি সেই কাব্য সম্ভার । অতঃপর নিজেই গেলেন লাজলজ্জা সম্বরণ করে । রাজা জানালেন কাব্যের বিনিময়ে তো বহুদিন পূর্বেই তাঁকে ভূমি, জীবিকা এবং নানাবিধ উপহারে ভূষিত করেইছেন তিনি । কিন্তু চন্ডীদাস বললেন কিন্তু আমার পুঁথিটির কি হবে? তার স্বত্ত্ব কার থাকবে ? আর কেই বা সে পুঁথির প্রচার করবে ? মানুষ জানবেনা সেই অমূল্য পদ রচনার সুললিত কাব্যমালা ? রাজা বললেন "আপনার কাব্য সত্যি খুব সুন্দর, মন আর প্রাণ এককরে রচিত। অপূর্ব ছন্দমাধুরী পদের । কিন্তু কৃষ্ণ যে আপনার হাতে কলঙ্কিত, লম্পট এক ব্যক্তিত্ত্ব । মূল ইতিহাসকে যা বিকৃত করে, ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানে । চন্ডীদাস আহত হয়ে বললেন তাঁর পদসম্ভার ফিরিয়ে দিতে । রাজা বললেন " এত বড় আস্পর্ধা? ঐ পুঁথির কথা ভুলে গিয়ে নতুন পদ রচনা করুন। অসহায় চন্ডীদাস ফিরে এলেন রিক্ত হাতে ।
স্থানঃ নানুর, বীরভূম
কালঃ বসন্ত
সময় কালঃ বর্তমান
চন্ডীদাস ডাক দিলেন "রামীণী, এই অবেলায়, হাওয়াবদলের সময় নদীর ঘাটে বসে কাপড় কাচলে যে ঠান্ডা লেগে যাবে তোমার । দিনের আলো নিবে এল যে....
" চলো প্রিয়তমা রামীণী, আর যে সয়না বিরহ আমার, মধুর হোক আজ যামিনী ।
সুন্দরী রামীণি আলুলায়িত চুলের লক্স ভিজে হাতে পুঁছে বললে,
যাই গো যাই ! কাপড় কেচে যেটুকুনি পাই, কোনোরকমে পেট চলে, তা কি তোমার জানা নাই ?
চন্ডীদাস বললেন, সে তো ভালো করেই জানি....
আমার মত অধম স্বামী, একটিও কাব্যমালা বেচতে পারিনা আমি ।
রামীণির ভিজে আঁচল । কাপড় কেচে কেচে পায়ে হাজা । কাপড়কাচার পাটার ওপর থেকে উজালার কৌটো, কাপড়কাচার ব্রাশ আর ডাঁইকরা সদ্য কাচা ভিজে কাপড় দেখিয়ে চন্ডীদাসকে বললে, একটু নিঙড়ে দাও বাপু, হাতের কবজিতে আর জোর পাইনে। চলো গিয়ে মেলে দি, ঐ জামাকাপড়, ধোবিঘাটের ঐ লাইনে ।
চন্ডীদাস আড়চোখে দ্যাখেন রামীর ঢলঢল কাঁচা যৌবন । নিজেকে মনে হয় বড় পুণ্যবাণ । আগের বৌ ত্যাগ দিয়েছে অভাবের জ্বালায় । বাশুলীদেবীর থানে রামীকে নিজের পত্নী বলে মেনেছেন । এখন রামী তাঁর ধ্যান, রামী তাঁর বাগদেবী । প্রতিটি রাতের অপেক্ষা । নতুন নতুন কামকলা। আর রামীর অণুপ্রেরণায় চন্ডীদাসের রোজ নতুন নতুন পদ লেখা ।
কখনো এই নারীমূর্তিকে তাঁর মনে হয় তাঁর বৈষ্ণব কাব্যের শ্রীরাধিকা আবার কখনো তাকে মনে হয় বাঁশুলি দেবীর প্রতিমূর্তি । একদিন রাতে স্বপ্ন দেখেন চন্ডীদাস । তীব্র কামপিপাসা জাগে শরীরে । স্ত্রী পদ্মজাকে কিছুই দিতে পারেননি তিনি । মনের দুঃখে চলে গেছে সে । বহুদিন নারীসঙ্গ বিবর্জিত একঘেয়ে জীবন তাঁর । অথচ পূর্ণ যৌবন তাকে এখনো ছেড়ে যায়নি । পদ্মজা রূপবতীও ছিলনা । তবুও তো সতীলক্ষ্মী ছিল । কিন্তু আজ তাঁর স্বপ্নে একবার আসেন রামী একবার অসেন দেবী বাঁশুলির মুখাবয়ব । কেন এমন হয়? হৃদয়ের একুল ওকুল সব উথালপাথাল । ভোর হতেই ঝাঁটা হাতে রামিণীকে দেখেই বোবার মত হতভম্ভ হয়ে যান কবি । রজকিনিকে বলেন কাছে আসতে । যেন রামির রাই-অঙ্গের ছটা লেগে শ্যাম আজ পুলকিত, বিস্মিত, শিহরিত ! দুহাত বাড়িয়ে রামীর আলগা বাহুকে ছুঁয়ে আলিঙ্গন করতে গেলেন । রজকিনী বলে উঠলেন " ও মা, ছি ছি, এ কি গোঁসাই? একি করছেন আপনি? আজ থেকে এই মন্দিরের সব অধিকার তোমায় দিলাম । তুমি বাসলীদেবীর বেদীস্পর্শের, দেবীবিগ্রহকে ছোঁবার, ভোগ নিবেদন করার সব অধিকার তোমার । কুন্ঠিত, লজ্জিত রামিণি মনে মনে ভাবলেন নীচুজাতের মেয়ে হয়ে আমার এ কি সৌভাগ্য হল ঠাকুর ? পাড়ার লোকে যদি একঘরে করে দেয় তার গোঁসাইকে । সে পড়ল দোটানায় । পুরুষের চোখে যে কামের আগুন জ্বলতে দেখেছে সে তাকে প্রকৃত ভালোবাসবে তো ? না কি কেবল তাঁর শরীরের আকর্ষণেই বারবার তার কাছে আসছে, প্রেমনিবেদন করতে ।
এই দোলাচলে সে বলেই ফেলল " না সে হয়না গোঁসাই । লোকলজ্জাকে আমি ভয় পাই । যেদিন তুমি আমাকে সত্যি সত্যি নিজের করে ভালোবাসবে সেই দিন এই শরীর আমি তোমায় দেব । আরো লেখ তুমি কবি । মনসংযোগ করো লেখায় । বয়স চলে গেলে এত সুন্দর পদ রচনায় ভাটা পড়বে । কাব্যের স্বতস্ফূরণ আর তখন হয়ত ঘটবেনা ।
চন্ডীদাস মনে মনে বুঝলেন "এ বাসলীদেবীরই ছলাকলা । আরো ডাকতে হবে তাকে । আরো রচনা করতে হবে পদ । তবেই দেবী তার একান্ত আপনার হবে"
এদিকে মনের সুখে চন্ডীদাস পদরচনা করে চলেছেন । অবসরে রামীর সাথে দুষ্টুমিষ্টি খুনসুটি, ভালোবাসার দীপাবলি জ্বলছে তখন রামীর মনে । চন্ডীদাসের কুঁড়ে সেই আলোয় সেজে উঠেছে । পুরুষপ্রকৃতি একজোটে সৃষ্টিসুখে রাধাকৃষ্ণ পদলীলায় মেতে উঠেছে ।
এদিকে কাব্যের পান্ডুলিপি জমা পড়ে গেছে অনেকদিন ছাতনার রাজা হামিরের কাছে । কিন্তু রাজার তরফ থেকে কোনো উচ্চবাচ্য নেই । আর চন্ডীদাসের কাছে না আছে সেই পান্ডুলিপির প্রতিলিপি না আছে কোনো যোগাযোগের মাধ্যম । স্বয়ং রাজদরবারে উপস্থিত হয়ে রাজার কাছ থেকে জেনে আসতে মানে লাগে তাঁর । অথচ রাজা ফেরত পাঠিয়েও দেননি সেই কাব্য সম্ভার । অতঃপর নিজেই গেলেন লাজলজ্জা সম্বরণ করে । রাজা জানালেন কাব্যের বিনিময়ে তো বহুদিন পূর্বেই তাঁকে ভূমি, জীবিকা এবং নানাবিধ উপহারে ভূষিত করেইছেন তিনি । কিন্তু চন্ডীদাস বললেন কিন্তু আমার পুঁথিটির কি হবে? তার স্বত্ত্ব কার থাকবে ? আর কেই বা সে পুঁথির প্রচার করবে ? মানুষ জানবেনা সেই অমূল্য পদ রচনার সুললিত কাব্যমালা ? রাজা বললেন "আপনার কাব্য সত্যি খুব সুন্দর, মন আর প্রাণ এককরে রচিত। অপূর্ব ছন্দমাধুরী পদের । কিন্তু কৃষ্ণ যে আপনার হাতে কলঙ্কিত, লম্পট এক ব্যক্তিত্ত্ব । মূল ইতিহাসকে যা বিকৃত করে, ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানে । চন্ডীদাস আহত হয়ে বললেন তাঁর পদসম্ভার ফিরিয়ে দিতে । রাজা বললেন " এত বড় আস্পর্ধা? ঐ পুঁথির কথা ভুলে গিয়ে নতুন পদ রচনা করুন। অসহায় চন্ডীদাস ফিরে এলেন রিক্ত হাতে ।
স্থানঃ নানুর, বীরভূম
কালঃ বসন্ত
সময় কালঃ বর্তমান
চন্ডীদাস ডাক দিলেন "রামীণী, এই অবেলায়, হাওয়াবদলের সময় নদীর ঘাটে বসে কাপড় কাচলে যে ঠান্ডা লেগে যাবে তোমার । দিনের আলো নিবে এল যে....
" চলো প্রিয়তমা রামীণী, আর যে সয়না বিরহ আমার, মধুর হোক আজ যামিনী ।
সুন্দরী রামীণি আলুলায়িত চুলের লক্স ভিজে হাতে পুঁছে বললে,
যাই গো যাই ! কাপড় কেচে যেটুকুনি পাই, কোনোরকমে পেট চলে, তা কি তোমার জানা নাই ?
চন্ডীদাস বললেন, সে তো ভালো করেই জানি....
আমার মত অধম স্বামী, একটিও কাব্যমালা বেচতে পারিনা আমি ।
রামীণির ভিজে আঁচল । কাপড় কেচে কেচে পায়ে হাজা । কাপড়কাচার পাটার ওপর থেকে উজালার কৌটো, কাপড়কাচার ব্রাশ আর ডাঁইকরা সদ্য কাচা ভিজে কাপড় দেখিয়ে চন্ডীদাসকে বললে, একটু নিঙড়ে দাও বাপু, হাতের কবজিতে আর জোর পাইনে। চলো গিয়ে মেলে দি, ঐ জামাকাপড়, ধোবিঘাটের ঐ লাইনে ।
চন্ডীদাস আড়চোখে দ্যাখেন রামীর ঢলঢল কাঁচা যৌবন । নিজেকে মনে হয় বড় পুণ্যবাণ । আগের বৌ ত্যাগ দিয়েছে অভাবের জ্বালায় । বাশুলীদেবীর থানে রামীকে নিজের পত্নী বলে মেনেছেন । এখন রামী তাঁর ধ্যান, রামী তাঁর বাগদেবী । প্রতিটি রাতের অপেক্ষা । নতুন নতুন কামকলা। আর রামীর অণুপ্রেরণায় চন্ডীদাসের রোজ নতুন নতুন পদ লেখা ।
Friday, February 24, 2012
ফাগুণ লেগেছে মনে মনে
লিঙ্গরাজ টেম্পলে...
ফাল্গুন পড়তে না পড়তেই পায়ের তলায় সর্ষে । তিনি যাবেন ভুবনেশ্বরে পরীক্ষা নিতে । ঊড়িষ্যা যাবেন শুনেই আমার কেমন ছোঁক ছোঁক অবস্থা । আকুলিবিকুলি প্রাণ ; সমুদ্রের ঢেউ যেন ডাকতে লাগল আমাকে । ভাবলাম উনি হয়ত বলবেন "পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য নইলে খরচ বাড়ে" কিন্তু পরদিনই দুটো টিকিট দেখালেন উনি । চোখ চিকচিক করে উঠল । তাহলে এই ফাগুণেই দেখা হবে তার সাথে । ১৭ই ফেব্রুয়ারি খড়গপুর থেকে ট্রেনে চড়ে সোজা ভুবনেশ্বর । বিকেলে বিকেল হোটেলে যাওয়া । তারপরই প্ল্যান ছকে নেওয়া হল । ওনার পরীক্ষা নেওয়া ১৮তারিখে হোটেলের পিছনেই আইআইটি ভুবনেশ্বর সেন্টারে । হেঁটে ১৭তারিখেই আশপাশ দেখে নেওয়া হল । কোথায় অটোরিক্সা পাওয়া যায় , কোথায় ভাড়ার গাড়ি পাওয়া যায় ইত্যাদি । পরদিন ভোরে উনি পরীক্ষা নেবেন ১০টায় চলে যাবেন সেন্টারে । তার জন্য আমি প্রচুর ম্যাগাজিন , গল্পের বই আর আমার সর্বক্ষণের সাথী ল্যাপটপটিকে নিয়ে গেছি । হোটেলের ঘরে টিভিও আছে একখানি । সেখানে বাংলা চ্যানেল ও আসে খান কয়েক । কিন্তু ইন্টারনেট কানেকশান খুব হতাশ করল ।তবু একটু বইপড়া আর টিভি দেখা হল । ১৮তারিখে ভোরে উঠে স্নান সেরে আমরা দুজনে অটোরিক্সা করে ভোর সাতটা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ টেম্পলের উদ্দেশ্যে । মন্দিরময় ভুবনেশ্বরে এটি একটি অন্যতম বৃহত মন্দির । কলিঙ্গ স্থাপত্যে একে পঞ্চরথের আদল বলা হয় । ১১ th century তে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন সোমবংশীয় রাজা জজাতি কেশরী । ভুবনেশ্বরের সবচেয়ে বড় মন্দির এটি ।
ঊড়িষ্যার কোনো মন্দিরে দর্শনার্থীরা লিঙ্গের মাথায় জল, ফুল বা দুধ চড়াতে পারেনা ।একদল পান্ডাদের স্বেচ্ছাচারিতা, অহমিকা আর ট্যুরিষ্ট বিদ্বেষ জায়গাটির স্থান মাহাত্ম্যকে কিছুটা ম্লান করে দিয়েছে । যারাই আসছেন দূর দূর থেকে সকলের মুখেই সেই এককথা । লিঙ্গরাজ যেন ঐ প্রদেশের পূজারী এবং সেবায়েতদেরই সম্পত্তি । উত্তর বা পূর্ব ভারতের আর কোথাও এমনটি খুঁজে পাইনি । ভূবনেশ্বরী, কালী, সাবিত্রী, যমরাজ ইত্যাদি কয়েকটি মন্দিরে প্রবেশ করলাম । মন্দিরের ভেতরে সেলফোন ও ক্যামেরা নিষিদ্ধ । এযুগেও এত রক্ষণশীলতা । যারপরনেই অবাক হলাম ।
মন্দিরের প্রবেশদ্বার
আসার পথে রামেশ্বর মন্দির দেখলাম আর দূর থেকে দেখলাম বিন্দুসাগর । হোটেলে ফিরে এলাম সাড়ে আটটার মধ্যে । এসে নিরামিষ ব্রেকফাস্ট । দুধ কর্ণফ্লেক্স, ফল, এবং পুরী সবজী । এবার উনি চলে গেলেন পরীক্ষা নিতে আর আমার অখন্ড অবসরের সঙ্গী তখন বইমেলায় কেনা একরাশ বই । গৌতম ঘোষদস্তিদারের "পুরুষ ও প্রকৃতি" বইখানি পড়লাম । দারুন আনন্দ পেলাম । জয়দেব-পদ্মাবতী, চন্ডীদাস ও রজকিনী রামিনী এবং বিদ্যাপতির কাব্য রচনায় নারীর প্রভাব আর সেই নিয়ে এক নিখুঁত প্রেমের গল্প । এযুগের কবি ও লেখক গৌতম ঘোষ দস্তিদারের অপূর্ব লেখনীতে তা বড়ৈ সুখপাঠ্য হয়ে উঠেছে । বাংলাসাহিত্যের ইতিহাস আমার একটি অতি প্রিয় বিষয় ছিল উচ্চমাধ্যমিকে । আবার বেশ ঝালিয়ে নিলাম সেই অবসরে । দুপুরে কোলকাতা দূরদর্শনে "কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী" সিনেমাটি দেখলাম । টিভিতে সিনেমা বড় একটা দেখিনা । সেই অবসরে বেশ আনন্দ দিল । সন্ধেবেলায় উনি ফিরলেন সাড়েসাতটায় । ডিনার খেলাম । অনবদ্য এক কাবাব প্ল্যাটার নিলাম । চিকেন্, মাটন কাবাব এর সাথে স্যালাড, তন্দুরী চিকেন, একবাটি ডাল মাখানি ও নান । সব দু পিস করে খেতে খেতে পেট ভরে যায় । বেশ ভ্যালু ফর মানি ডিশ । শেষে একটু আইসক্রিম । আবার একটু হেঁটে আসা ফাগুণের হাওয়া গায়ে মেখে । পরদিন ১৯তারিখে একটু দেরী করে ঘুম ভাঙল । যথারীতি ব্রেকাফাস্ট খেয়ে ন'টার মধ্যে উনি চলে গেলেন শেষদিনের পরীক্ষা কন্ডাক্ট করতে । আর আমার অবসর শুরু হল গীতগোবিন্দমের বাংলা অনুবাদের চেষ্টা নিয়ে । সেদিন দুটো বাংলা ম্যাগাজিন ছিল সঙ্গী । দুটোর মধ্যে হোটেল থেকে চেক আউট করে আমি নীচে হোটেলের লাউঞ্জে এসে বসলাম । উনি আসবেন দুটোনাগাদ । একখানা ভাডার গাড়ী করে এবার গন্তব্য ভুবনেশ্বর থেকে পুরী । পথে পড়ল পিপলি ।
পিপলি ট্যুরিস্ট মার্কেট
ওড়িশার একটি গ্রাম আজ থেকে বহুবছর ধরে তাদের এপ্লিক শিল্পের সুচারু কারিগরীকে বাঁচিয়ে রেখেছে । হাইওয়ের দুধারে পিপলি আজ একটি ট্যুরিস্ট মার্কেট । ওড়িশার যাবতীয় দৃষ্টিনন্দন হ্যান্ডিক্রাফট পাওয়া যায় এখানে । তারপর পুরী পৌঁছলাম বিকেলে । সমুদ্রের ধারেই একটা হোটেলে ঢুকে চেক ইন করলাম । ঘর থেকে সমুদ্র দেখা যায় । ব্যস ! আর কিছুই প্রত্যাশিত ছিলনা সেই মূহুর্তে । ব্যাগপত্র রেখে রিক্সো করে সোজা জগন্নাথ মন্দির । পান্ডার সাহায্যে একদম তিন জ্বলজ্যান্ত বিগ্রহের সম্মুখে আমি । শিহরিত, তৃপ্ত এক মাদকতায় আপ্লুত আমরা । পুজো দিলাম । প্রসাদ পেলাম । জগন্নাথের ভোগ খেলাম । আগুণ গরম ভাত, পোলাও, খিচুড়ি, সুক্তো, অড়হর ডাল এবং পায়েস । সেই সন্ধ্যে বেলায় একসাথে লাঞ্চ এবং ডিনার হয়ে গেল জগন্নাথের কৃপায় । হোটেলে ফেরার পথে শঙ্করাচার্য প্রতিষ্ঠিত পুরীধামের আশ্রমে গেলাম । তারপর হোটেলে ফিরে বিশ্রাম সেরাতের মত । পরদিন স্মার্টফোনের সাহায্যে জানা গেল পুরীর সি বিচে সমুদ্রদয়ের সময় । সেই মত বিছানা ছেড়ে পায়ে পায়ে বালির চরে । সেই চেনা বঙ্গোপসাগরের পুরীর সমুদ্রতট
সূর্যদেব গুগলের নির্ঘন্ট মেনে যথারীতি উঠে পড়লেন ঘুম থেকে । পুবের আলো, লালচে আকাশ, সমুদ্রের রাশি রাশি ঢেউ, নোনাজলের ফেনা সবকিছু মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছিল সেই ভোরে । সেদিন ছিল শিবরাত্রি । পুরীতে কোনো শিবলিঙ্গ খুঁজে পেলামনা যে গিয়ে একটু জল ঢেলে পুজো করব । অগত্যা বালির চরে নিজেই বালি দিয়ে এক ঢিপি বানিয়ে মন্ত্র বলে জাল ঢাললাম তার মাথায় আঁচলা ভরে । তারপর জলযোগ করলাম কচুরী তরকারী দিয়ে । এবার হোটেলে ফিরে এসে স্নান সেরে একটা গাড়িভাড়া করে চিল্কার পথে । চিল্কায় পৌঁছে স্পীডবোটে ভাসমান.... ডলফিন, রেড ক্র্যাব ও পরিযায়ী পাখির উদ্দেশ্যে
Sunday, February 12, 2012
Monday, January 9, 2012
মধ্যপ্রদেশ (১)
সেদিন ছিল শীতের মধ্যরাত্রি । ১৯শে ডিসেম্বর রাত তিনটেয় কোলকাতা থেকে হাওড়া স্টেশনে গিয়ে ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে ভোর সাড়ে চারটেয় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে চেপে বসলাম আমরা ছ'জনে । ট্রেন ছাড়ার কথা আগের দিন রাতে । কিন্তু সরকারী নিদেশে রাতে কোনো ট্রেন যেতে পারবেনা ঝাড়খন্ডের মধ্য দিয়ে । তাই আমাদের এই হয়রানি ।
ঐ দিন আবার আমার জন্মদিন ছিল । বেশ অন্যরকম জন্মদিন হল এবার । আমি নিজেই কেক বানিয়েছিলাম একটা । আমার শাশুড়িমা কুচো নিমকি আর আমার মা কড়াইশুটির কচুরী বানিয়ে নিয়ে ছিলেন সাথে । আমি একদম শুকনো করে ঝাল ঝাল আলুর দম রান্না করে নিয়েছিলাম । সাথে ছিল নলেনগুড়ের সন্দেশ । ভোর হতেই সকলে হ্যাপি বার্থডের রেকফাস্ট নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ল । গরম চা কেনা হল আর সাথে সব খাবার দাবার দিয়ে জম্পেশ প্রাতরাশ হল সেই সকালে । খেয়ে দেয়ে আবার চলা কু ঝিক ঝিক করে । সাথে কয়েকটা ম্যাগাজিন । সকলে মিলে হৈ হৈ করে যাবার মজাটাই আলাদা । অবশেষে বার ঘন্টা পর অর্থাত বিকেল সাড়ে চারটের সময় আমরা পৌঁছলাম বিলাসপুর । গাড়ি করে এবার অমরকন্টক যাবার পালা । বিন্ধ্য ও সাতপুরা যেখানে মিলিত হয়েছে মৈকাল পর্বতের সাথে সেই স্থানে অমরকন্টক ।
খুব গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চলতে লাগল । প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা চলার পর ক্লান্ত হয়ে সেই রাতে আমরা অমরকন্টকে এসে পৌঁছলাম । মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের হলিডে হোমে বিলাসবহুল তাঁবুতে রাত্রিবাস । ৬জনের জন্য ৩টি তাঁবু । ঘরে রুম হিটার ছিল তাই রক্ষে । পরদিন ভোরে খবরের কাগজে দেখি সেরাতের তাপমাত্রা ছিল ১ডিগ্রি সেল্সিয়াস । রাতের খাওয়া হলিডেহোমের রেস্টোরেন্টেই সারা হল । ভেজ স্যুপ্, স্যালাড, গরম গরম রুটি, ডাল আর পনীর সহযোগে । পরদিন ভোরে উঠে জায়গাটির আশপাশ দেখে, চারিদিকে ফুলের সমারোহ আর ঝকঝকে তকতকে একটা নান্দনিক শোভায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম । স্নান, প্রাতরাশ সেরে এবার আমাদের যাত্রা অমরকন্টকের পুরোণো এবং নতুন মন্দিরের উদ্দেশ্যে। সাথে অবশ্যই নর্মদা এবং শোন নদীর উত্স সন্ধান ।
MPTDCর হলিডে হোমের তাঁবু
কলচুরি মহারাজ কর্ণ তৈরী করেছিলেন এই সব প্রাচীন মন্দির ..... অমরকন্টকের প্রাচীন মন্দির
নর্মদা-উদ্গম-এই কুন্ডের ১২ফুট নীচে নর্মদেশ্বর শিবলিঙ্গের পাশ দিয়ে নর্মদা উত্পন্ন হয়েছে অমরকন্টক পর্বত থেকে ।
অমরকন্টকের নতুন মন্দির
সূর্যকুন্ডকে বেষ্টন করে একরাশ মন্দির তৈরী করেছিলেন সম্ভবত অহল্যাবাঈ ....মাই কি বাগিয়া -যেখানে কুমারী নর্মদার সখ্যতা হয়েছিল গুল-ই-বকোয়ালি নামে সুন্দরী ক্যাকটাস ফুলের সাথে । খেলে বেড়াতেন তার সাথে । এ ও এক লীলা ! এই ফুল নাকি দুর্দান্ত ভেষজ । খুব যাগ্-যজ্ঞ করে মানুষ এখানে । নর্মদা এখানে খুব জাগ্রত
শোনমুডা ( শোন নদীর উত্সস্থল )
শ্রীযন্ত্র মন্দির
কপিলধারা-যেখানে কপিলমুনি তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেন
নর্মদাকে ছুঁয়ে দেখা
Subscribe to:
Posts (Atom)