Monday, January 17, 2011

মকরের মেলা



আজ দেখে এলাম খড়গপুর থেকে বেরিয়ে একটা ছোট্ট গ্রাম কাশীজোড়ায় মকর সংক্রান্তির মেলা । খড়গপুরের আইআইটি ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে প্রেমবাজারের পরই সালুয়া । সেখানে এয়ারফোর্সের বেস । ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলসের হেড কোয়ার্টার এই সালুয়া । সালুয়া ক্রস করে যখন ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে চললাম তখন বিকেল সাড়ে চারটে । সূর্য তখন পশ্চিম মেদিনীপুরের পশ্চিম আকাশের কোলে ঢলে পড়েছে । মাইলের পর মাইল ধরে চলল অনাবাদী জমিও । ফসল নেই কোনো ।লালমাটির রাস্তা খুব চওড়া নয় । প্রত্যন্ত গ্রাম । আবার কিছুটা ধানজমি । ফসল উঠে গেছে পোষের পরবে । গ্রামের লোককে জিগেস করে করে পৌঁছে গেলাম কাশীজোড়া আর বেশ অনেকটা ধানক্ষেতের এবড়োথেবড়ো জমির ওপর মহা ধূমধামে বসেছে এই মকর সংক্রান্তির মেলা কুঝলাঝেঠি গ্রামের নাম । মেলার একপাশে মহাপুরুষ-থান অর্থাত সব দেবদেবীর মূর্ত্তি পূজো হয়েছে । আর নবান্নে ওঠা সদ্যপ্রসূত ধানগাছের গোড়ায় শুকনো মাটিতে বসেছে মেলা । সাতদিন ধরে চলে এই মেলা । জমজমাট মেলা প্রাঙ্গণ । একদিকে হচ্ছে তরজা গান । 

 অন্যদিকে খাবারদাবার । আর পাঁচমিশেলী হরেকরকম জিনিষপত্র বিক্রি হচ্ছে । আমি কিনলাম একটি ছোট্ট শিবলিঙ্গ । আর পাঁচটা মেলার মত লোহার সব জিনিষ, প্লাস্টিকের জিনিষ, খেলনা, বাসনকোসন তো আছেই । আর চোখে পড়ল দূর দূর গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে আসা সব মানুষ গুলো। কত আনন্দে ঘুরছে মেলায় । শীতের বিকেলে মা বাবার হাত ধরে কত কুচোরা বায়না ধরেছে এটাসেটা কেনার । 

ফেরার সময় দেখলাম গ্রামের মাটীর সব দোতলা বাড়ি । আর দেখলাম ধানের গোলা । ঢেঁকিও দেখলাম । কিন্তু খুব গরীব এই গ্রাম । ঠিক আর পাঁচটা বাংলার গ্রাম যেমন । বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া সর্বত্র একরকম গ্রাম । একধরণের মেলা । অনেকটা একই রকমের দেখতে মানুষগুলো ও । কেউ পায়ে হেঁটে মেলায় গেছে কেউ সাইকেলে ডাবল ক্যারি করে । কেউ আবার নতুন কাপড় ও পরেছে , কেউ বা একখানা নতুন চাদর । কোনো বাচ্চা মেয়ের মাথায় টুকটুকে লাল ফিতে আর তার মায়ের মাথায় একগাদা তেলমাখা সিঁথিতে টকটকে সিঁদুর । কিন্তু সূর্য ছিল একটাই ! পশ্চিম মেদিনীপুরের পশ্চিম আকাশে । একাই রঙ ছড়িয়ে চলেছে আপন মনে ....ঠিক যেমন ছড়ায় রোজ রোজ এই গ্রাম বাংলার আকাশে । মনে হল, এত দারিদ্রের মধ্যেও এদের মেলা বসে, এরা মকর সংক্রান্তি পালন করে ধূমধাম করে । সদ্য উঠেছে ধান তাদের ঘরে । কি জানি তাই বুঝি এত মজা তাদের !