Sunday, February 27, 2011

"খড়গপুর" নাম কেন হ'ল ?


খড়গপুর আইআইটি ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে উত্তর দিকে ৫ কিলোমিটার গেলে পড়বে ইন্দা বাজারের মোড় । সেখান থেকে পূবদিকে আরো খানিকটা গেলে পড়বে ইন্দা দুর্গা মন্দির আর তারপরই বাঁদিকে খড়গেশ্বরের শিব মন্দির । এই মন্দিরের নামেই এই জায়গার নাম খড়্গপুর । কারো মতে,   রাজা খড়্গসিংহ তৈরী করেছিলেন এই মন্দির । আবার কারো মতে বিষ্ণুপুরের রাজা খড়্গমল্ল ২০০ বছর আগে এই মন্দির তৈরী করেছিলেন ।


মন্দিরের অভ্যন্তরে  গর্ভগৃহে প্রোথিত  খড়্গেশ্বর শিবলিঙ্গ  । শিবরাত্রি, আর গাজনের সময উতসব হয় এখানে ।


মন্দির চত্বরে বহু প্রাচীন একটি অশ্বত্থ গাছের বেদীমূলে রয়েছে আদিবাসীদের আরাধ্যা কোনো দেবতার প্রস্তর মূর্ত্তি । দক্ষিণবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার এই অঞ্চলগুলি প্রধানত:আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা ছিল । তবে  এখন সূর্য দেব রূপে ইনি পূজিত হন ।
মন্দিরের নাট মন্দিরে এখন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়েছে । স্থানীয় মানুষ জন আর মন্দিরের পুরোহিত বিদ্যালয়টি চালনা করেন । মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণও তাঁরাই করেন আর মন্দিরের মধ্যে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে এই স্কুলটি করেছেন তাঁরা ।


জটাজুটো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই বহু পুরোণো অশ্বত্থ বৃক্ষ আর বহন করছে সময়ের সাক্ষ্য ।


 পুরো মন্দিরটী তৈরী পাথর দিয়ে । কোনো ইঁট নেই এর গায়ে । এখন সাদা রঙ করা হয়েছে ।

Friday, February 18, 2011

ঘুরে এলাম পাথরা ও কর্ণগড়


১৬ই ফেব্রুয়ারি ২০১১ । একটা ছুটির দিন ছিল । তার আগের দিন রাতে আমাদের আরো এক বন্ধুর সাথে হঠাতই প্ল্যান হ’ল বেরোনোর । ” একে তো ফাগুন মাস , দারুন এ সময় ” ! আর খড়গপুরে এসে অবধি আমরা  নেট সার্ফ করে চলেছি এর আশপাশ নিয়ে । সময় পেলেই বন্ধুরা মিলে আর এন্ড ডি করছি …ছুটির দিনের অপেক্ষা করছি । হঠাতই মিলে গেল আরো একটি ট্যুরিস্টস্পটের  । বাতাসে সজনে ফুলের গন্ধ আর পলাশের রঙ সঙ্গে করে বেরিয়ে পড়লাম আমরা চারজন মিলে..
মেদিনীপুর থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরে মন্দিরময়ে পাথরা গ্রামের ।


কংসাবতী (কাঁসাই) নদীর ধারে, মন্দিরের পর মন্দির রয়েছে পাথরায় । মন্দির, নাট মন্দির , কাছারিবাড়ি, রাসমঞ্চ, ঠাকুরদালান । পাশেই পাথরা গ্রাম । গ্রামের বাড়ি, পুকুর, ধানক্ষেত,  আলুর ক্ষেত,  সবজীর ক্ষেত, বাঁশঝাড় সবকিছুর মধ্যেই মন্দিরময় এই পাথরা ।  সবমিলিয়ে চৌত্রিশটি অসাধারণ সব মন্দির আছে ।  এগুলি প্রায় ২০০ বছরের পুরোণো ।


১৭৩২ সালে বাংলার নবাব আলিবর্দি খাঁ ঐ পাথরা গ্রামের  রত্নাচক পরগণার রাজস্ব আদায়ের জন্য বিদ্যাসুন্দর ঘোষাল নামে একজনকে নিযুক্ত করেন । ঐ বিদ্যাসুন্দর বাবু তাঁর নিজের শখে একের পর এক এইখানে মন্দির বানান । মন্দির গুলির ধ্বংসাবশেষ দেখলে মন খারাপ হয়ে যায় । সব শিবলিঙ্গের ভাঙা করুন অবস্থা ..




একটি এনজিও সংস্থা "পাথরা আর্কিওলজিকাল প্রিজার্ভেশন কমিটি",  আইআইটি খড়গপুরের সাথে সম্মিলিত ভাবে এই সুন্দর মন্দিরগুলির তত্ত্বাবধানে ব্রতী হয়েছে । মন্দিরের কারুকার্য পোড়ামাটির ইটের ; স্টাইলটা বিষ্ণুপুরের বাংলার  চালাঘরের মত আর অভিনব শিল্পশৈলি তার গায়ে ।



সেখান থেকে আরো কিছুটা গিয়ে হাতিওলকা গ্রাম পেরিয়ে গেলাম কর্ণগড় ।


পুরোণো গড় আজ আর নেই । নতুন মন্দির হয়েছে অনেকগুলি ।

সেইখানে মন্দিরের প্রসাদ খেয়ে দুপুরের মধ্যেই আবার ফিরে এলাম খড়গপুরে |

Wednesday, February 9, 2011

কুরুম্ভেরা দুর্গে কিছুক্ষণ !



এখন যে আই-আই-টি খড়গপুরকে আমরা দেখি প্রাক স্বাধীনতার যুগে সেখানে ছিল হিজলী জেল ।
আই-আই-টি ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে দক্ষিণদিকে যাত্রা করলে হিজলি ফরেস্ট শুরু হয় ।

শীতের রোববারের সকালে এই অরণ্যের হাত ধরে, কেশিয়াড়ি হয়ে ঘুরে আসা যায় ভসরাঘাট| সুবর্ণরেখা নদীর ধবধবে সাদা, মসৃণ ও রোদের আলোয় চিকচিকে বালির চরে হেঁটে নদীকে ছুঁয়ে দেখে আসা যেতেই পারে ।

নদী দেখে ফেরার পথে বেলদার রাস্তায় ২ কিলোমিটার গেলে পড়বে কুকাই গ্রাম । সেখান থেকে আরো ২ কিলোমিটার গেলে পড়বে গগনেশ্বর গ্রামে কুরুম্ভেরা দুর্গ । পুরাতাত্মিক মনুমেন্ট হিসেবে স্বীকৃত এই ফোর্টটি সত্যি সত্যি এখনো স্বমহিমায় তার রাজকীয়তা বজায় রেখেছে ।

পশ্চিম মেদিনীপুরে যে এত অভিনব একটি স্থাপত্য আছে তা হয়ত অনেকেরই জানা নেই ।

কোলকাতার অনতিদূরে এমন একটি জায়গা আছে । কোলকাতায় আছে অনেক সৃষ্টিশীল মানুষ । কিন্তু কোনারক আর খাজুরাহে হয় ডান্স ফেষ্টিভাল কিন্তু কুরুম্ভেরাতেও তো হতে পারে ! আমার এখানে গিয়ে কেবলই মনে হতে লাগল সে কথা । আমার মনের ক্যামেরায় ধরা র‌ইল সেই রাজকীয় দুর্গের ছবি !