Sunday, April 28, 2013

খাজুরাহো ---কে বলে শুধুই erotica ???



আমরা বারাণসী থেকে একটি গাড়ী ভাড়া করে সকালবেলা বেরিয়ে পড়লাম দীঘি নিনোরা-তাল দিয়ে ঘেরা মধ্যপ্রদেশের ছোট্ট এক গ্রাম খাজুরাহের দিকে । বিন্ধপর্বতের কোলে এই গ্রামে ছিল অনেক খেঁজুর গাছ । সোনার মত গুচ্ছ গুচ্ছ খেঁজুর ঝুলে থাকত সেখানে । তাই নাম খাজুরাহো ।
রেওয়া হয়ে যেতে হবে আমাদের । মাঝখানে বেলার কাছে গোবিন্দগড় মোড়ে দুপুরের খাওয়া । তারপর সাতনার দিকে । পথে পড়ল পান্না টাইগার রিজার্ভ । ঘন অরণ্যের মধ্যে দিয়ে গাড়ী চলল। রেওয়া পর্যন্ত রাস্তা খুব খারাপ । পান্নার পথ ন্যাশানল হাইওয়ে ৭৫ । খুব তাড়াতাড়ি চলেছিলাম । এই পথ সোজা যায় কাশী থেকে কন্যাকুমারী । একে বলে "দক্ষিণপথ" । বিন্ধ্যপর্বতের গা ঘেঁষে চলা । হাতী আছে নাকি এই জঙ্গলে । জানলার কাঁচ সরাতেই বুঝলাম আমরা ঘাটি উপত্যকার মধ্যে দিয়ে চলেছি । বনফুলের সোঁদা গন্ধে ম ম চারিদিক । বড় নদী মান্ডলা পেরোলাম ।

সন্ধ্যের ঝুলে হোটেলে পৌঁছে মালপত্র রেখেই বেরিয়ে পড়া ঝাঁ চকচকে ছোট্ট শহর খাজুরাহে । শুনলাম "সন-এট-লুমেয়াঁ" অর্থাত "লাইট এন্ড সাউন্ড” শো সন্ধ্যে সাড়েছ'টায় । মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজম আয়োজিত হিন্দী ও ইংরেজীতে ধারাভাষ্যে একঘন্টা ধরে সেই প্রদর্শনী ওয়েষ্টার্ণ গ্রুপ অফ টেম্পলসের প্রকান্ড মাঠে । এত ছোট্ট শহরে হাতের মুঠোয় সবকিছু । দীপাবলীর পর বেশ ঠান্ডা । দোকানপাট রমরমিয়ে চলছে। হোটেল, পলিনেশিয়ান রেস্তোঁরা আর ফরেন ট্যুরিষ্টের ভীড় বেশী । টিকিট কেটে চেয়ারে বসলাম । ঘুটঘুটে অন্ধকার। অমাবস্যা ছিল গতকাল অবধি । আকাশে প্রতিপক্ষের একসূতো চাঁদের ফালি আর কয়েকটা ফুটফুটে তারা । ভাষ্যপাঠের শুরু । দূরে-কাছের মন্দিরের সীমারেখা জ্বলে উঠল । illumination ! রঙীন ও কৃত্রিম আলোয় কালো আকাশের পর্দায় ভেসে উঠল মন্দিরের স্কেচ। কি অপূর্ব । স্বর্গের অপ্সরা, ঊর্বশী রম্ভা, কিন্নর-কিন্নরী সব আছেন মন্দিরগাত্রে । প্রতিদিন আলোকের ঝর্ণাধারায় ধুয়ে যায় এদের কালিমা ।
ঘন্টাধ্বনির শুরু একযোগে । দেবদাসীর নূপুরের সিঞ্জিনী। ঘুঙুরের শব্দ, আবার ভাষ্যপাঠ । চন্দ্রবর্মণের জন্ম ও মন্দির তৈরীর কারণ শুরু থেকে শেষ একনাগাড়ে । একটুও একঘেয়েমি নেই । মনে হয় রাতটা এখানে থাকলেই ভালো হত ।
ইতিহাসের পাতায় তখন চান্ডেলারাজ তার জীবনদর্শন এঁকে চলেছেন । চান্ডেলারাজ চন্দ্রবর্মণ রচিত ইতিহাসের সাক্ষী আমরা । কালাঞ্জর, কাশী এবং খাজুরাহোর শাসক দেশের নামকরা ভাস্করদের আহ্বান জানান । তার ইচ্ছেয় চন্দ্রবংশীয় রাজচিহ্ন স্বরূপ এক যুবকের দ্বারা ধরাশায়ী সিংহের প্রতিমূর্তি নির্মাণ করল ভাস্কর । আর তারপর রাজার আদেশে তৈরী হল একের পর এক অপূর্ব মন্দির । নগররীতিতে তৈরী মন্দিরে অভূতপূর্ব স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের মেলবন্ধন । শুধুই ছেনি-হাতুড়ি নয়, পাথর কুঁদে এমন শিল্পকর্মে লাগে ধৈর্য্য ও কল্পনা । অগণিত ভাস্করের শৈল্পিক কর্মে ফুটে উঠল কাইমুর স্যান্ডস্টোনে তৈরী অভিনব মন্দিরময় খাজুরাহো । গ্রানাইট পাথর এল পূর্বদিকের কেন নদীর ধারে পান্না পাথর খনি থেকে। চৌষট্টি যোগিনী মন্দির নির্মাণ হল । তারপর একে একে তৈরী হল কান্ডারিয়া মহাদেব, জগদম্বা, পার্শনাথ , লক্ষণ, দুলাদেও , বিশ্বনাথ , আদিনাথ, মার্তন্ডেয় মন্দির । আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার রক্ষণাবেক্ষণে ইতিহাসের দলিল-দস্তাবেজ বহন করছে এই মন্দিরগুলি । কেবলমাত্র মার্তন্ডেয় মন্দিরে বিশাল শিবলিঙ্গে পূজা হয় ।

বিকেলের আলতাগোলা আকাশে ফাগের রং চুঁইয়ে পড়ছে খাজুরাহোর স্থাপত্যে।
নারীমূর্তির কোমল পেলব প্রতিকৃতি মূর্ত হয়ে উঠছে সেই রংয়ে । পুরুষমূর্তিগুলিও প্রাণ পেল সেই প্রদোষে ।

মানুষের জীবন, দৈনন্দীন চাহিদা, নারী-পুরুষের সৃষ্টি রহস্যের মূলে মৈথুন, জাগতিক সবকিছু । যুদ্ধ, বিবাহ থেকে শুরু করে জীবনযাপনের অনুষঙ্গ সব নিয়ে ভাস্কররা তৈরী করেছিল মন্দিরের দেওয়াল, মন্ডপ, পোর্টিকো, তোরণ । মন্দিরের মধ্যে মন্দির । সেখানে মহাদেব, নন্দী, বিষ্ণুর বরাহ অবতার । ভাঙতে এসেছিল কুতুবুদ্দিন আইবক । তাকে রুখে দেওয়া হয়েছিল কালাঞ্জরে । কি অপূর্ব কারুকার্য ! বাত্স্যায়ণের কামসূত্র থেকে অপ্সরার রূপসজ্জা। কখনো নারী ত্রিভঙ্গ আবার কখনো বহুভঙ্গ রূপ । চোখে কাজল পরছে কিম্বা সিঁথিতে সিঁদুর । দর্পণে মুখ দেখছে কিম্বা এখনকার ফ্যাশন প্যারেডের মত দলে দলে তাদের শরীরি বিভঙ্গ বা নৃত্যরতা নর্তকীর ঘুঙুর বাঁধার দৃশ্য । রম্ভারূপসী পায়ের পাতা আঁকা বা ঊর্বশীর পায়ের নীচে কাঁটা বের করা । কোথাও দেখি ধ্যানমগ্ন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ বা মৃত্যুর দেবতা যমরাজ। কোথাও আবার সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে নির্মিত চিত্রগুপ্ত মন্দির । চেয়ে দেখি কামদেব এর দুই পাশে রতি ও প্রীতি !


ভাস্করের হাতে যেন ছিল পরশপাথর । ছেনি-হাতুড়ির সমণ্বয়ে ফুটিয়েছিল মন্দিরগাত্রের কি অপূর্ব বৈচিত্রময়তা ! একমেবাদ্বিতীয়ম্‌ ! কিছু কিছু ভেঙে গেছে কালের স্রোতে । ভূমিকম্প-ঝঞ্ঝা ফাটল ধরাতে পারেনি এখনো বেঁচে থাকা পঁচাশিটি মন্দিরকে । অক্ষয় সেই স্থাপত্য, অব্যয় সেই ভাস্কর্য ।
শৃঙ্গাররত নরনারীর কামোদ্দীপক ভাস্কর্য । কিন্তু কে বলে শুধুই erotic sculpture আছে খাজুরাহে? প্রতি পঞ্চাশটির মধ্যে একটি হয়ত মৈথুন রত দম্পতির সুখ যাপনের চিত্র বাকী সব রিয়েল লাইফের টানা ও পোড়েন । হয়ত রাজার আদেশে অণুপ্রাণিত হয়েছিল ভাস্কর । স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ফুটিয়ে তুলেছিল রমণ ক্রিয়া । কিন্তু সে তো জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। শুধু তো তাই নয় । সংসার, পুজোপার্বণ, রাজার যুদ্ধযাত্রা হিন্দু দেবদেবী সবকিছুই তো বাস্তব জীবনের অংশ ।
এমন হাজারে হাজারে স্থাপত্য । দেখে শেষ করা যায়না । কূল কিনারা পাইনা ভেবে সেই ভাস্করের হাতের শৈলীকে । কত বছর ধরে না জানি ছেনি-হাতুড়ি-বাটালির শব্দের তুফানে অনুরণিত হয়েছিল খাজুরাহের আকাশ বাতাস । ভাস্করের মনমন্দিরের কল্পনাপ্রসূত হয়ে জন্ম নিয়েছিল এই অভিনব শিল্পকর্ম ।





কিভাবে যাবেন : হাওড়া থেকে ট্রেনে বারাণসী ও সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে বারাণসী যাওয়া সবচেয়ে ভালো ।
কখন যাবেনঃ প্রখর গ্রীষ্ম বাদ দিয়ে সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল অবধি খাজুরাহো যাবার আদর্শ সময় ।
কোথায় থাকবেনঃ খাজুরাহোতে প্রচুর ভালো ভালো হোটেল আছে । তবে একটু ভালো হোটেল পেতে গেলে আগে থেকে বুক করে যাওয়াই ভালো কারণ বিদেশী পর্যটকে উপছে পড়ছে ।

Thursday, April 4, 2013

তমলুকের শক্তিপিঠ দেবী বর্গভীমায়




আমরা সেদিন হঠাত বেরিয়ে পড়েছিলাম পাঁচজনে । গাড়ি নিয়ে খড়গপুর থেকে তমলুক । গুগ্‌ল ম্যাপে মোটামুটি ঠাহর করে নিয়ে বেরিয়ে পড়া আরকি । আর অগতির গতি স্মার্টফোন বাকী দিশা দেখানোর জন্য তো আছেই । তমলুক পূর্ব মেদিনীপুরের ডিস্ট্রিক্ট হেড কোয়ার্টার্স । এককালে যার নাম ছিল তাম্রলিপ্ত । পূর্বে রূপনারায়ণ আর পশ্চিমে সুবর্ণরেখা নদীর তীরে এই তাম্রলিপ্ত ছিল বাংলার অন্যতম প্রধান বন্দর । বঙ্গোপসাগর এর খুব কাছে । সেদিন ছিল শ্রাবণের আধো আলো আধো ছায়ায় মেঘ-বৃষ্টি-রোদ্দুরের একটা ছুটির দিন ।

কোলকাতা মুম্বাই রোড ধরে ন্যাশানাল হাইওয়ে সিক্সের ওপর দিয়ে কোলাঘাট । কোলাঘাট থেকে হলদিয়া হাইওয়ে ধরে দীঘার রাস্তা ধরালাম । রোদবৃষ্টির খেলা চলল সাথে । সবুজ ক্ষেত, শ্রাবণী বনানীতে এবার বর্ষা অধরা । বৃষ্টিতে এদের সজীবতা আরো প্রকট হয় । কিন্তু এবার এদের শ্যামলতা কিছুটা নিষ্প্রভ । ধান নেই মাঠে । তবুও হাওয়ায় মৌসুমী গন্ধ । ঝিরিঝিরি ইলশেগুঁড়ি নিয়ে তমলুক এল। বাঁদিকে বেঁকে গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে কেলোমাল গ্রামের মধ্যে দিয়ে লেভেলক্রসিং টপকে যাচ্ছি তখন । দীঘার ট্রেন এই রেলপথে যায় বুঝি । স্টেশনের নাম শহীদ মাতঙ্গিনী । এবার তমলুক-পাঁশকুড়া বাসষ্ট্যান্ড পৌঁছে হরিরবাজার, জেলখানা মোড়, চক্রেশ্বর পেরিয়ে বর্গভীমা মন্দির । কাছেই একটি মাঠে গাড়ি রাখা হল । সেখান থেকে পায়ে হেঁটে মায়ের মন্দিরে । 
 

দেবী বর্গভীমা হলেন তমলুক শহরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী । দেবীকে ঘিরে দুটি কিংবদন্তী আছে । প্রাচীন যুগের কিংবদন্তী অনুযায়ী জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে দেবীর মাহাত্ম্যের উল্লেখ পাওয়া যায় । মহাভারতের যুগে যখন তাম্রলিপ্তে ময়ূরবংশীয় রাজা তাম্রধ্বজের রাজবাড়িতে এক জেলে বৌ নিয়মিত মাছ সরবরাহ করত । একদিন সে পথে আসার সময় তার ঝুড়ির মাছে, রাস্তার একটি জলভরা গর্ত থেকে জল নিয়ে ছেটানো মাত্রই মরা মাছগুলি জীবন্ত হয়ে ওঠে । রাজবাড়িতে গিয়ে এই ঘটনা জানানোর পর জেলেবৌ সহ রাজা ঐ স্থানে পৌঁছে জলেভরা গর্তের বদলে সেখানে দেবীমূর্তি আসীন একটি বেদী দেখতে পান সেইখানেই রাজা ঐ দেবীর পূজা শুরু করেন ও সেই দেবীই বর্গভীমা নামে পরিচিত ।
প্রাচীনযুগের আরো একটি কিংবদন্তী অনুযায়ী দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা দেবী বর্গভীমার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন । প্রাচীন যুগের তৃতীয় কিংবদন্তী অনুযায়ী দক্ষযজ্ঞের সময় সতীর বাম গুল্ফ(গোড়ালি) তমলুকের এই অংশে পতিত হয়েছিল তাই এটি একটি শক্তিপিঠের অন্যতম । 
 
কিংবদন্তীর কড়চা দূরে সরিয়ে রাখলেও বিশ্বাস করতে হয় যে দেবী বর্গভীমা হলেন দক্ষিণবঙ্গের অগণিত দেবদেবীর অন্যতম স্থানীয় লৌকিক দেবী । মূল মন্দিরের গঠনরীতিও চমত্কার এবং এখানে বর্গভীমার সাথে অন্যান্য দেবদেবীর পাথরের মূর্তি আছে । সপ্তরথ রীতিতে নির্মিত এর নাম বড় দেউল । যেখানে দাঁড়িয়ে ভক্তরা দেবীকে দর্শন করেন তার নাম জগমোহন । এছাড়াও রয়েছে যজ্ঞমন্দির এবং নাটমন্দির । উত্তরদিকে মন্দির সংলগ্ন একটি কুন্ড আছে । মন্দিরের বাইরের দেওয়ালে দেবদেবীর ২৬টি টেরাকোটার নিপুণ চিত্র আছে । 

 
মন্দিরে পুজো চড়িয়ে প্রসাদ খেয়ে এবার মহাপ্রভু নিরামিষ ভোজনালয়ে দ্বিপ্রাহরিক আহারপর্ব । সেখান থেকে যাওয়া হল তমলুক রাজবাড়ি দেখতে । বিশাল চত্বরে রাজবাড়ির অবশেষ । তাক লাগানো বারমহল, অন্দরমহল, বিশাল দালান, সংলগ্ন মন্দির ঘুরে দেখলে বেশ ছমছমে অনুভূতি হয় । মহাভারত্, ভাগবত ও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে উল্লিখিত প্রভাব প্রতিপত্তিশালী ময়ূরধ্বজ রাজবংশের এই বাসস্থানের কিছুই পড়ে নেই । আছে শুধু বট-অশত্থ্ব-পিপলের শিকড়ে জীর্ণ রাজবাড়ির দেওয়াল । থাম, অলিন্দ ইত্যাদির পাশাপাশি আবডালের চিক-মহল লক্ষ্য করলাম যেখান থেকে হয়ত রক্ষণশীল মহিলারা উঁকি দিতেন বারমহলে । নূপুরের ছন্দে আর এস্রাজের অণুরণনে হয়ত বা ভেসে যেত রাজবাড়ির আনাচকানাচ । মাথার ওপর দিয়ে চামচিকে উড়ে গেল । কিন্তু তবুও লাল ইটের স্থাপত্য কীর্তি আজো জ্বলজ্বল করে ঝলমলে রোদে । মনে হল "কালের ধ্বনি শুনিতে কি পাও?" পাশেই বিশাল পুকুরের জলে হাত পা মুখ ধুয়ে ঠান্ডা হাওয়ায় ছায়ায় ছায়ায় জিরেন নিয়ে আবার ঘরে ফেরার পালা । কোলকাতা থেকে দীঘা, শঙ্করপুরের রাস্তায় ফেরার পথে ঘুরে আসা যেতেই পারে এই দুটি স্থান । 
 সকালবেলা ৪ এপ্রিল ২০১৩ 
 

Sunday, February 17, 2013

শ্রীমান তীর্থরাজ এবং জলপরি


 শোন নদীর উত্সমুখ  
বিলাসপুর থেকে ভাড়ার গাড়িতে উঠে যাত্রা শুরু মধ্যপ্রদেশের অনুপপুর জেলার অমরকন্টকের উদ্দেশ্যে । মন্দিরময় পুরোণো শহর অমরকন্টক যার আরেক নাম তীর্থরাজ । যেখানে ভারতের দুই উল্লেখযোগ্য পর্বত বিন্ধ্য এবং সাতপুরা মিলিত হয়েছে মৈকাল পর্বতের সাথে । আর সেই অমরকন্টক হল নর্মদা এবং শোন নদীর উত্পত্তি স্থল । 
 কপিলধারা
এই সেই নর্মদা নদী যে নাকি মৈকাল পর্বতের কন্যা । ভরা বর্ষায় তার জল থৈ থৈ রূপলাবণ্য নিয়ে পূব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে গাল্ফ অফ খাম্বাতে গিয়ে তার আত্ম সমর্পণ । তার এই যাত্রাপথের সঙ্গী হয়েছে কত কত উপনদী, মিলিত হয়েছে তার সাথে হিরণ, তিন্ডোনি, কোলার, হাথনী, গোয়ী, তাওয়া, এবং গাঞ্জাল.. বন্ধুনদী হয়ে তার কোলে এসে পড়েছে । স্থান দিয়েছে তার তীরে কত কত কোল-ভীল-কিরাট-ব্যাধ উপজাতিদের । যাদের লালনে শিবমহিমা ব্যাপ্ত হয়েছে নর্মদার তীরে তীরে । মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছে সেই অমরকন্টককে ঘিরে । নর্মদা যার উত্পত্তিস্থল । মহাকবি কালিদাসের রচনায় অমরকন্টককে "অমরকূট" বা যে পাহাড়ের শৃঙ্গের বিনাশ হয়না কিম্বা "আম্রকূট" বা যে পাহাড়ের চূড়া আমগাছের প্রাচুর্য্যে সমৃদ্ধ বলে আমরা জানি । নর্মদার একরাশ পাহাড়ী ঝোরায় মাঝেমাঝেই লুকিয়ে পড়া আর হঠাত হঠাত তার কলকল শব্দে গহিন জঙ্গলে বয়ে চলা দেখে মনে হল পাহাড় আর নদীর এই লুকোচুরি, নর্মদার তিরতির করে ঝরে পড়া কিম্বা দুধ-সাদা ফেনিল জলরাশির মধ্যে যে আনন্দ তা কিশোরী বালিকা বা যুবতীর হাসির মতই স্বতস্ফূর্ত এবং সাবলীল । 



অমরকন্টকের প্রাচীন মন্দিরগুলি পুরোণো ভারতীয় মন্দিরের ঐতিহ্য বহন করছে । অসাধারণ সুন্দর তার স্থাপত্য । কলচুরি মহারাজ কর্ণের আমলে তৈরী এই মন্দিরগুলি । সপ্তরথের আকৃতি বিশিষ্ট একটি শিব মন্দির রয়েছে যার তিনটি গর্ভগৃহ । একে বলে কর্ণ মন্দির । অমসৃণ লাল পাথরের তৈরী । কর্ণমন্দিরের উত্তরে ১৬টি স্তম্ভ বিশিষ্ট মাছেন্দ্র নাথ মন্দির । এছাড়া রয়েছে পঞ্চরথের আকৃতি বিশিষ্ট পাতালেশ্বর মহাদেও মন্দির । কেশব নারায়ণ মন্দির । ঠিক পাশেই রয়েছে সূর্যকুন্ড । কথিত আছে, একসময় নর্মদা এই স্থান থেকে উত্সারিত হত এবং তাই মহারাজ কর্ণদেব মহাভারতের ৩০০০বছর পর এই সূর্যকুন্ডটি এবং সংলগ্ন পাতালেশ্বর শিবমন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। কুমারী নর্মদাকে আশ্রয় দেবার জন্য একটি প্রাসাদ তৈরী করা হয় যার নাম রঙমহল ।
পুরোণো মন্দির দেখে এবার গন্তব্য নর্মদা উত্সস্থল বা নর্মদা-উদ্‌গম এবং যাকে ঘিরে রয়েছে একটি বিশাল কুন্ড ও তার আশেপাশে একরাশ নতুন মন্দির । রাজকীয় প্রবেশদ্বার এই মন্দিরের। এখন নর্মদার উত্সমুখ জলের ১২ফুট নীচে যেখানে নর্মদেশ্বর শিবলিঙ্গ রয়েছেন । মহাদেবের স্বেদগ্রন্থি থেকে সৃষ্ট এই নর্মদা । বছরে দু-একবার কুন্ডের পিছনে দরজা খুলে জল ছেঁচে ফেলে দিয়ে আবার কুন্ড ভর্তি করে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় । সেই সময় নর্মদেশ্বর এবং তার মন্দিরে প্রবেশ করা যায় । 
 নর্মদা উত্সস্থল বা নর্মদা-উদ্‌গম
নর্মদার উত্তরতীরে কপিলধারা জলপ্রপাত যেখানে মহামুনি কপিল তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন । কপিলধারা থেকে ১কিমি পশ্চিমে রয়েছে দুগধারা জলপ্রপাত । ঋষি দুর্বাসা এখানে তপস্যা করেছিলেন । এছাড়াও রযেছে ঘন জঙ্গলের মধ্যে শম্ভূধারা এবং দুর্গাধারা জলপ্রপাত । ঝরণার অবলীলায় ঝরে পড়া আর পাহাড়-মাটী-নদীর এত সুন্দর সখ্যতায় অমরকন্টক যেন হয়ে উঠেছে চির নবীন । নদীর উচ্ছলতায় পাহাড় যেন কথা বলে ওঠে এখানে । 
 মাই-কি-বাগিয়া
ভার্জিন নর্মদা সুন্দরীর যৌবনপ্রাপ্তি এই অমরকন্টকে । কুমারী নর্মদা তখনো মা নর্মদা হয়ে ওঠেনি । প্রাচীন মন্দিরের কিছু দূরেই পড়ে  যেখানে রয়েছে চর্ণোদক কুন্ড । ঘন অরণ্যের মধ্যে ফল ও ফুলগাছের ছায়া সুনিবিড় ইকোসিস্টেমে কুমারী নর্মদা স‌ই পাতিয়েছিল গুল--বকোয়ালি ফুলের সাথে । অসাধারণ সুন্দর দেখতে এই ক্যাকটাসের ফুল । নর্মদার জোলো হাওয়ায় গভীর অরণ্যে ফুটে থাকে এই ফুল যার বৈজ্ঞানিক নাম এপিফাইলাম অক্সিপেটালাম। হিন্দীতে বলে নিশিগন্ধী বা গুল--বকোয়ালি । এটি একটি অত্যাশ্চর্য বনৌষধি ।
যাইহোক আমরা হলাম পরিদর্শক । কুমারী নর্মদা আর গুল--বকোয়ালির সখ্যতায় গড়ে ওঠা মা-কি বাগিয়া দেখে নিলাম চটপট । হোম, যজ্ঞ, পূজোপাঠ চলছে মহা ধূমধাম করে । খুব নাকি জাগ্র্ত এই স্থান ।
কিন্তু শীতে ফুলবন্ধুটির দেখা পেলাম না । মার্চমাসে আবির্ভাব হয় তার ।
মা কি বাগিচার ১ কিমি দক্ষিণে যাওয়া হল শোনমুডা বা শোন নদীর উত্সমুখ দেখতে । এটিকে অমরকন্টকের স্বর্গ বলা হয় । ব্রহ্মার বরপুত্র শোন । রাস্তা থেকে কিছুটা নেমে গিয়ে দেখা গেল একটি হনুমান মন্দিরের গায়ে শোনমুডা বা শোন নদীর উত্পত্তিস্থল । এখান থেকে অতি শীর্ণকায় শোন পাহাড়ের গা বেয়ে কিছুটা এগিয়ে তারপর প্রেসিপিসের ওপর দিয়ে পাহাড় থেকে লাফ মেরে নীচের উপত্যকায় জলপ্রপাত হয়ে ঝরে পড়ে বেরিয়ে চলে গেছে উত্তর দিকে সুদূর গঙ্গার সাথে মিলিত হবার জন্য । আশ্চর্যের ব্যাপার হল যে দুটি বড় নদী এত নিকটবর্তী স্থান থেকে উত্সারিত হয়ে দুটি দুদিকে বয়ে চলে গেছে । নর্মদা আরব্যসাগরের দিকে আর শোন উত্তরদিকে গঙ্গার মধ্যে দিয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে । প্রকৃতির এই ভৌগোলিক খেয়ালকে পুরাণে এক বেদনাদায়ক কাহিনীর মধ্যে লিপিবদ্ধ করা আছে । সেখানে বলা হয় নর্মদার সাথে শোনের বিবাহ নাকি কোনো কারণে বাঞ্চাল হয়ে যায় । আজীবনকাল এইভাবে নর্মদা ও শোন একে অপরের থেকে মুখ ঘুরিয়ে রয়েছে ।
ছোটবেলা থেকে যে মান্ধাতার কথা আমরা শুনে আসছি সেই পৌরাণিক সূর্যবংশীয় রাজা মান্ধাতা আনুমানিক ৬০০০ বছর পূর্বে অমরকন্টকের নিকটবর্তী ঋক পর্বতের গায়ে রাজত্ব করতেন । এও শোনা যায় যে মান্ধাতার পুত্র পুরুকুত্সার রাণী নদী নর্মদার নামকরণ করেছিলেন । তবে ইতিহাসে এর কোনো উল্লেখ নেই । 
আনন্দবাজার পত্রিকা, শনিবার, ২৬শে মে ২০১২, ওয়ানস্টপ ভ্রমণ

Friday, February 15, 2013

একটি প্রাগৈতিহাসিক চিঠি, ভীমবেটকার গুহা থেকে...


সেই গুহায় থাকত একদল আদিম মানুষ । সে প্রায় আন্দাজ দু'লক্ষ বছর আগে আফ্রিকার কোনো এক জায়গায় কোনোও এক বানর জাতীয় প্রাণী চতুষ্পদের কুব্জতা ছেড়ে দুপায়ে উঠে দাঁড়িয়ে মানব জাতিতে তাদের উত্তরণ ঘটাতে সমর্থ হয়েছিল।
সেই দ্বিপদ মানুষ আফ্রিকা থেকে হাঁটতে হাঁটতে ছড়িয়ে পড়ে অধুনা ইউরোপ, এশিয়া এবং আমেরিকার দিকে । হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট থেকে জানা যায় যে এই জাতির একটি শাখা আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্য পেরিয়ে ভারতবর্ষের মাঝখান দিয়ে দক্ষিণ পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়া অতিক্রম করে আলাস্কার মধ্যে দিয়ে আমেরিকা প্রবেশ করে । কল্পনা করতে অসুবিধা হবেনা যদি আমরা ভাবি যে এই শাখার জনা কয়েক সদস্য ভারতবর্ষ অতিক্রম করার সময় বিন্ধ্য পর্বতের নিকটবর্তী অধুনা "ভীমবেটকা" নামক স্থানে কিছু অসাধারণ গুহা দেখে থমকে গিয়েছিল । তারা ভেবেছিল থাক আর সুদূর আমেরিকায় না গিয়ে ঐ স্থানেই ঘর-গেরস্থালি পাতা যাক । ১ লক্ষ বছর আগে থেমে যাওয়া জনৈক আদিম মানবের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছিল ভারতবর্ষের প্রথম জনপদ না হলেও শৈলাশ্রয় বা যাকে বলে রক-শেলটার । প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই ১লক্ষ বছরকে চারটি ভাগে ভাগ করেছেন : নিম্নপ্যালিওলিথিক যুগ ( ১০০০০০ - ৪০০০০ বছর ), মধ্য প্যালিওলিথিক যুগ ( ৪০০০০-২০০০০ বছর) , উচ্চ প্যালিওলিথিক (২০০০০-১০০০০ বছর) এবং মেসোলিথিক যুগ ( ১০০০০-২৫০০ বছর)


মেসোলিথিক যুগ আমাদের পৌঁছে দেয় আমাদের অতি পরিচিত ঐতিহাসিক যুগে। যার খবর আমরা ইতিহাসের পাতায় অনেক পড়েছি। কিন্তু আজকের কাহিনী পাঠককে পৌঁছে দেবে সেই আক্ষরিক অর্থের প্রাগ-ঐতিহাসিক যুগে যখন প্যালিওলিথিক এবং মেসোলিথিক যুগের সন্ধিক্ষণে যখন মানুষ প্রথমবার আহার, আশ্রয় এবং মৈথুন এর চিন্তা অতিক্রম করে সৃজনশীলতার বাতায়নে ভাসিয়ে দিল তার গা । ভাষার সফিষ্টিকেশন হয়ত তখনো হয়নি কিন্তু ক্ষুন্নিবৃত্তির অবকাশে সে তার মনের কথা দেওয়াল লিখনে রূপান্তরিত করে নিজের পারিপার্শ্বিক জনজীবনের ও দৈনন্দিন কর্মজীবনের একটা রেখাচিত্র ফুটিয়ে তুলল যা আজকে দশ হাজার বছর পরেও আমরা জানতে পারি ভীমবেটকার বিখ্যাত গুহাচিত্র বা রক-আর্ট রূপে ।

ভারতবর্ষের মানবসভ্যতার এই সুপ্রাচীন ঐতিহ্য ১৯৫৭-১৯৫৮ এ কে আবিষ্কার করে জনসমক্ষে তুলে ধরেন ডাঃ ভি এস ওয়াকাঙ্কার । প্রায় ৪০০টি চিত্রাঙ্কিত গুহা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভীমবেটকার গভীর জঙ্গলে । এবং এই শৈলাশ্রয়গুলিকে এর প্রাচীনত্ব এবং মানব ইতিহাসে এর তাত্পর্য স্বীকার করে UNESCO তাদের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ তো হল তত্ত্বকথা । আশ্চর্য বিষয় এই যে আজো একবিংশ শতাব্দীতে বিশাল এই গুহার মধ্যে দাঁড়িয়ে এবং গুহার দেওয়ালের চিত্রগুলি দেখলে মনে হয় আমরা আবার ফিরে গেছি সেই ১০০০০বছর পূর্বে যখন গৃহস্বামী শিকার করে কুলায় ফিরেছেন এবং "গৃহবধূ"সেই শিকারের মাংস আগুণে ঝলসাচ্ছেন ও অন্য কেউ হয়ত সেই অবকাশে গুহার দেওয়ালে মেলে ধরছে তার সৃজনশীলতা। স্থান মাহাত্ম্যের দাপটে গায়ে কাঁটা দেয় ।

পেশাদারি প্রত্নতত্ত্ববিদেরা ভীমবেটকায় পাওয়া পাথরের অস্ত্র, প্রাগ্‌ঐতিহাসিক কঙ্কাল, ভস্মচূর্ণ এবং মৃত্পাত্রের টুকরো নিয়ে অনেক গবেষণা করে ১লক্ষ বছরের কাহিনী তৈরী করেছেন । কিন্তু আমাদের মত আপামর জনসাধারণের কাছে ভীমবেটকার মাহাত্ম্য হল তার গুহার দেওয়াল চিত্রণ। এখনো যা ঐতিহ্যের সাথে বর্তমান হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে । সময়ের দলিল বলছে যা পুরাতন । কালের স্রোত যাকে বিনষ্ট করতে পারেনি । মুছে যায়নি সেই সব গুহাচিত্রের রং । অজানা কোন রঙে তুলি ডুবিয়ে আঁকা সেই গুহারা । আজকের মোটিফ রূপে যা পাঞ্জাবী, শাড়িতে আমরাও দেখি সেই লোকচিত্রের সারল্য নিয়ে স্বমহিমায় ভীমবেটকার গুহাচিত্রেরা অমলিন। যে গুহাচিত্রগুলি এখনো বর্তমান সেগুলির কাল নির্ণয় করে দেখা যায় যে সম্ভবতঃ ৯ হাজার বছর (মেসোলিথিক যুগ)থেকে ২৫০০বছর আগে অবধি এইগুলি আঁকা হয়েছিল । অতএব এই গুহাচিত্রগুলি ভারতবর্ষের মানব সভ্যতার ৬৫০০ বছরের দলিল । এই সাড়ে ৬ হাজার বছরের মানবজাতির যা চিন্তার পরিবর্তন হয়েছিল চিত্র অঙ্কনের প্রযুক্তির পরিবর্তন হয়েছিল এবং আশ্চর্যের ব্যাপার হল কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছিল তারও নজির রয়ে গেছে ভীমবেটকার এই দেওয়ালে । ছবির বিষয়বস্তু প্রথমে ছিল পশুপাখীর । পরে তার সাথে জুড়েছে নারী, পুরুষ ও শিশুর অবয়ব । তার ও পরে পশুর সঙ্গে মানুষের যুদ্ধ, পশুর পিঠে মানুষের আরোহণ ইত্যাদি । আবারো দেখা গেল কিছু তদানীন্তন সামাজিক পটভূমি । ঘোড়ায় চড়া ও মাথায় ছাতা নেওয়া রাজার ছবির অপূর্ব চিত্র যা এখনো নজর কাড়ে । এছাড়াও রয়েছে জ্যামিতিক নকশাচিত্র এর থেকে বোঝা যায় যে কালের আবর্তনে সমাজ কিভাবে পাল্টে গেছে ।

কিছু কিছু ছবিতে শিকারের দৃশ্য ও নৃত্যরত মানব মানবীর দেহ লক্ষ্য করা গেল । মজার ব্যাপার হল এই মানব মানবীর আঁকার ধরণটির সাথে এখনকার সাঁওতাল ও তফশিলী উপজাতির পুজোর সময় গৃহ অলঙ্করণের দেওয়াল চিত্রের বেশ ভালরকম মিল পাওয়া যায় । ভারতবর্ষের লোকসংস্কৃতির ধারাবাহিকতার এক অত্যাশ্চর্য নিদর্শন এই ভীমবেটকা । সাড়ে ছ'হাজার বছরের বিবর্তনে ছবির বিষয়বস্তু যেমন বদলে গেছে ঠিক তেমনি পাল্টেছে ছবি আঁকার পদ্ধতি, ব্যবহৃত রঙ ও সরঞ্জাম। ভীমবেটকার গুহাচিত্রে তিন ধরণের ছবি দেখা গেল । যা এখনকার ভাষায় জল রং, তেল রঙ এবং শুকনো মোম রং। বেশীর ভাগ ছবি সাদা ও লাল রঙে আঁকা । কিন্তু কিছু কিছু সবুজ, কমলা, হলদে ও বেগুণী । এই সব রং, রঙ করার পদ্ধতি এবং ছবির বিষয়বস্তু দিয়ে ভারতের যে ইতিহাস ফুটে ওঠে তাতে একটি অসাধারণ ইঙ্গিত আছে । সম্ভাব্য ৫০০০ বছরের পূর্বে কোনো ছবিতে ঘোড়া জাতীয় কোনো পশু দেখা যায় না । এই থেকে মনে হয় যে ৫০০০ বছর আগে যখন আর্য সভ্যতা ভারতে প্রবেশ করে সেই সময় থেকেই দেশে ঘোড়া আমদানী হয় ।
মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালের ৪৫ কিমি উত্তর পূর্বে ও হোসাঙ্গাবাদের ৩০ কিমি উত্তর পশ্চিমে, ওবাইদুলাগঞ্জ-ইটার্সি হাইওয়ের ( NH 69)ধারে ভীমবেটকার বিশাল জঙ্গল। দাক্ষিণাত্য মালভূমির উপকণ্ঠে, বিন্ধ্য পর্বতমালার উত্তর সীমানার গা ঘেঁষে, মধ্যপ্রদেশের রাইসেন জেলার রাতাপানি ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংক্চুয়ারির মধ্যে, একটি রুক্ষ এবং নীচু পাহাড়ী অঞ্চল জুড়ে ভীমবেটকার ব্যাপ্তি। ভীমবেটকার পর্ণমোচী (ডেসিডুয়াস) জঙ্গলমহল পাহাড় প্রকৃতির রুক্ষতাকে ঢেকে দিয়েছে অনেকটাই । ভীমবেটকার গা ঘেঁষে ভিয়ানপুর গ্রাম। ভীমবেটকার পাহাড়গুলি সমুদ্র লেভেলের ৬০০ মিটার উঁচুতে ।
নিঝুম সন্ধ্যায় বনমোরগ, কোয়েল, হুপো, শালিখ আর মাছরাঙারা দলে দলে এসে আশ্রয় নেয় ভীমবেটকার গুহার মধ্যে । পাইথন, কোবরা ও আপনমনে ঘোরে হেথায় হোথায় । মেঘ ডাকলে ময়ূর পেখম তুলে ময়ূরীর সাথে শৃঙ্গারের বার্তা পৌঁছে দেয় । আছে শ্লথ বেয়ার, হায়না, নীলগাই, চিতল হরিণ আর সজারু । গ্রামের মানুষ আর পশুপাখীর জন্য আছে বেতোয়া আর নর্মদা নদীর জল । মিডিয়াম আকৃতির দানা দানা স্যান্ড স্টোনের এই পাহাড় গুলির অনেকটাই মেটামরফোসিস হয়ে অর্থকোয়ারজাইট পাথরে রূপান্তরিত হওয়ায় দুধ সাদা রঙে হালকা গোলাপী ছোঁয়া এসেছে । ভীমবেটকার ঘন জঙ্গল সংলগ্ন উপত্যকায় ঘন জঙ্গলে বসন্তে পলাশের আগুন জ্বলে । মহুয়া ফুলের গন্ধে চারিদিক ম ম করে । এত প্রত্যন্ত পরিবেশে পশুপাখী, ডেসিডুয়াস বৃক্ষরাজি আর পাহাড়মাটির এই একাত্ম ইকোসিস্টেম ভীমবেটকার পরিবেশকে একটা অন্যরকম মাত্রা দিয়েছে । প্রকৃতির খেয়ালে পাহাড় যেন কথা বলে ওঠে এখানে । এক একটি পাহাড়ের আকৃতি এক একরকম । সয়েল ইরোশানের একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ এগুলি । প্রাগ ঐতিহাসিক যুগে যখন মানুষ ছিলনা তখন এই পাহাড় ছিল সমুদ্রের কাছাকাছি । তখন জলের খরস্রোতে তৈরী হয়েছিল গুহাগুলি । এবং কালের আবর্তনে সেই পাহাড় যখন সমুদ্র থেকে উঠে হিন্দুস্তানের মধ্যিখানে পৌঁছে যায় তখন আদিম মানুষ সেই গুহা আবিষ্কার করে সেখানে বসবাস শুরু করে আর আপনমনে মেলে ধরে তাদের সৃজনশীলতা যার ফলস্বরূপ আজো আমরা দেখতে পাই এই গুহাচিত্রগুলি। কোনোটি রচনা করেছে গুহার মধ্যে অডিটোরিয়ামের মত নিস্তব্ধ এম্বিয়েন্স । একখানা পাহাড় বিশাল কচ্ছপের মত আকৃতি নিয়ে মহাস্থবির জাতকের মত আবহমান কাল ধরে পাহাড়ের মাথায় বসে সব কিছু দেখে চলেছে । সৃষ্টি হয়েছে মাশরুমের মত একখানা দৈত্যাকার পাহাড় । এমন কত যে আকৃতি তা দেখে শেষ করা যায় না । কিন্তু সবচেয়ে বড় দ্রষ্টব্য হল গুহাচিত্র । বিশাল একখানা জু-রক রয়েছে যার ভেতরে আপন খেয়ালে বহু যুগ ধরে বহু মানুষ এঁকে গেছে একপাল পশুর রেখাচিত্র । কোনো ছবিতে ঘোড়সওয়ার নিয়ে চলেছে একপাল যোদ্ধা । কোনোটিতে কেউ এঁকে রেখেছে ১৯খানা মোষের প্রতিকৃতি। কোথাও আবার হাতীর পাল কিম্বা ছুটন্ত হরিণের সার । কেউ এঁকে রেখে গেছে ঘোড়ার পিঠে বাজনদার এবং নৃত্যরত মানুষ। কোনটিতে রাখাল বালক একপাল গবাদি পশুকে সামলাচ্ছে । এইভাবে জল, আর হাওয়ার দাপটে যুগ যুগ ধরে ভীমবেটকার গুহা গুলি বাঁচিয়ে রেখেছে এই দুষ্প্রাপ্য গুহাচিত্রগুলিকে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় যাকে ছুঁতে পারেনি এবং ভ্যান্ডালিজম যাকে বিনষ্ট করতে পারেনি ।


কথিত আছে পঞ্চপান্ডবেরা অজ্ঞাতবাসের সময় এইখানে বাস করেছিলেন । আর ভীমবেটকার সংলগ্ন লাক্ষাজুহার জঙ্গলে পান্ডবদের দুর্যোধন পুড়িয়ে মারার চক্রান্তে লাক্ষা নির্মিত গৃহ সকৌশলে নির্মাণ করেন । মহাভারত ছিল এবং থাকবে । আজ এই কিংবদন্তী সত্য কি মিথ্যা তা আমরা যাচাই করার কেউ ন‌ই । আমাদের কাছে বহু প্রাচীন এবং প্রাগঐতিহাসিক ভারতের রূপরেখা নিয়ে ভীমবেটকা অতীতের সব ঝড়ঝাপটা সামলেও স্বমহিমায় বর্তমান ।




আনন্দবাজার পত্রিকা, শনিবার, ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ২০১২ 

ভূস্বর্গ কাশ্মীরে কয়েকদিন....

 ১৭ই মে ২০১২
প্রতিবার পাহাড় না সাগর এই বিতর্কে হেরে যাই আমি । গরমের ছুটির ফাঁদে পা দিলেই হিমালয় টেনে নিয়ে যায় তার কাছে । এবারেও তার ব্যতিক্রম হল না ।

আমরা তিনজনে দিল্লী থেকে আবার শ্রীনগরের উড়ানে ।


ভূস্বর্গ কাশ্মীর কে তুলনা করা হয় ইউরোপের সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে । কয়েকদিনের জন্যে না হয় তোলা থাক সে তুলনা । সুইস আলপ্‌সের স্মৃতি তোলা থাক এলবামে । ওরে হিমালয় যে আলপ্‌সের চেয়ে কিছু কম নয় ...এই বলতে বলতে এগিয়ে চললাম ফোটোশপড নীল আকাশের দেশে । এমন নীল যে কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি! এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি চলল হৃদয়পুরা দিয়ে । 
-->
ঝাউগাছ আর লতানে গোলাপের গুল্মের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে বারবার মনে পড়ছিল ওপি নায়ারের কাশ্মীর কি কলির গানের সিকোয়েন্স । 

স্লোপিং রুফের বাড়িগুলো দেখে মনে পড়ে গেল খবরের কাগজের তুষারপাতের কথা । পথে চাপদাড়ি যুবক, বোরখা ঢাকা যুবতী আর মোড়ে মোড়ে সিআর পিএফ জওয়ানদের ভ্যান গাড়ি দেখে অনুভব করলাম কাশ্মীরের প্রতিকূলতা । 

পথে পড়ল রাজবাগ পার্ক । ঝিলামকে দেখলাম একঝলক । একে বলে বিতস্তা । ড্রাইভার মুক্তেয়ার বলল "দরিয়া ঝালেম" । 
-->
ঝিলাম সেতু পেরিয়ে ডাল ঝিলে এলাম আমরা । একদৃষ্টে চেয়ে থাকতে হয় কিছুক্ষণ । 

লেক যে এত বড় হয় আগে কখনো দেখিনি । শিলং এ বড়াপানি লেক দেখেছিলাম, সুইজারল্যান্ডের লুগানো লেক দেখেছিলাম । কিন্তু তাই বলে এত হৈ হৈ হাউসবোটের পসরা আর কূলে কূলে এত শিকারা
 শিকারার সারি বাঁধা ডাল লেকের ধারে.......

 ডালঝিলের মধ্যে ভাসমান পোষ্ট অফিস দেখে যারপরনেই অবাক আমরা !

নেহরুগার্ডেনে অবতরণ গোলাপের বাগানে । একটু ছবি তোলা । 


  নেহেরু গার্ডেন থেকে ডাললেকের প্যানোরমিক লুক  !!!
ডাললেকে ভোরের আলোয় একরকম । 

আবার ঝুপ করে নেমে আসা সন্ধ্যের ঝুলে তার রূপ অন্যরকম । আবার রাতের বেলা যেন পরী সেজে দাঁড়িয়ে রয়েছে রঙীন আলোর হাউসবোটের পসরা নিয়ে সেই একই ডাললেক সুন্দরী  ।  

আবার ভাসমান শিকারায় । মাছ খেগো বক, সারস আরো কত কি সেই ডাললেকের জলে ।  

 আশপাশে ভাসমান সবজী বাগানের মধ্যে দিয়ে লিলিপুলের মধ্যে দিয়ে । 

 হাউসবোটের রোয়াক ঘেঁষে । 

১৮ই মে ২০১২ 

শ্রীনগরের ডাললেকের ধারে হোটেলের কামরা থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শব্দে ঘুম গেল ভেঙে । মেঘ না মৌসুমী ? কাঁচের জানলায় অন্ধকারের থাবা । ভূস্বর্গ বৃষ্টিস্বর্গে পৌঁছে গেল না কি ! মনখারাপের পার্টির শুরু । জানলার ভারী পর্দা সরিয়ে দেখি কালো মেঘে আকাশ ঢেকে গেছে । 

প্রথমে টুথব্রাশ তারপর চায়ের কাপ হাতে আমি চোখ রেখেছি পাহাড়ের মাথায় । কখনো মেঘ উড়ে গেলে তুষারশিখর মুখ বেরে করছে আবার মেঘের চাদর তার গায়ে । আমাদের মনের চাপা টেনশনে ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে ততক্ষণে । রুম হিটার বন্ধ করলাম । হঠাত চানঘর থেকে এসে দেখি রোদ উঠেছে । পাহাড়ের চূড়ো হাসতে শুরু করেছে খিলখিল করে । সবজী পরোটা আর দৈ সহযোগে ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়া হল পহেলগামের উদ্দেশ্যে । হালকা ঠান্ডা তখন চিনার বনের মধ্যে । ঝিলামের ধারে ধারে চিনারের এই অভিভাবকত্ব মুঘল আমল থেকে । চিনারকে কেউ কুড়ুল মারতে পারবেনা । এই ইকোফ্রেন্ডলি চিনারকে নিয়ে কাশ্মীরিদের খুব গর্ব । 
এই সেই ঐতিহাসিক চিনার বৃক্ষ । সবুজতায় আর রাজকীয়তায় পূর্ণ !  চিনার পাতা কাশ্মীরের শিল্পকর্মের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত । 

পথে পড়ল পান্থচক । পাথরের সব কারখানা । কারিগরেরা সেখানে খুদে খুদে বানাচ্ছে শিল নোড়া, খলনুড়ি, হামান দিস্তা । কিনে ফেললাম একটা খলনুড়ি । বেশ অন্যরকম দেখতে । এটাই কাশ্মীরের ট্র্যাডিশানাল মশলা পেষার কল ।

লিডারভ্যালির ওপর দিয়ে চলেছি আমরা । মেঘ এসে ভাসিয়ে দিচ্ছে কখনো ।

টোলবুথে পয়সা ফেলে বেলাবেলি পহেলগামে প্রবেশ করলাম ।

 দাঁড়কাকের কর্কশ স্বর নির্জনতাকে ছাপিয়ে দিল । রাখাল ভেড়ার পাল লয়ে যায় মাঠে । ঘোড়া সওয়ারি নিয়ে ঘন্টি নেড়ে হাঁটে । হোটেলে পিটস্টপ । মালপত্র রেখেই বিলেটেড লাঞ্চ । তারপরই দরদস্তুর করে ঝিরিঝিরি ঝাউয়ের মাথায় টুপটাপ বৃষ্টি নিয়ে আমাদের ঘোড়ায় চেপে বৈশরণ এডভেঞ্চার । তিনটে জবরদোস্ত ঘোড়া , দুই সহিস আর আমরা তিন মূর্তি । ঘন বাদামী আট বছরের বুলডোজার্, হালকা বাদামী দশ বছরের চেতক আর আমার সফেদ ঘোড়া মাত্র তিন বছরের বাদল । 

বৈশরণ এল বুঝি । পাইনগাছের সারি দিয়ে ঘেরা সবুজ প্রান্তর । দূর দিগন্তে নীল আকাশের পৃথিবী । পৃথিবীর নীচে ঐ প্রান্তর যার নাম সুইত্জারল্যান্ড পয়েন্ট । ছবি তুলে তফাত করা যাবেনা আল্পসের বরফচূড়ো আর হিমালয়ের বরফচূড়োয়। ভিউপয়েন্টও বটে । নো প্লাস্টিক জোন । পরিচ্ছন্ন চা-কফির ঠেক । ঘোড়া থেকে নেমে গরম চায়ে চুমুক । ননস্টপ ডিজিটাল ক্লিকে বন্দী হল ভারতের সুইস পয়েন্ট । 
 পহেলগামে  টিপিক্যাল কাশ্মীরি ডিনার হল এক পথ-হোটেলে । অসাধারণ সুস্বাদু কাশ্মীরি খানা । গরগরে, মশলাদার মাটন গুস্তাবা আর রিস্তা । সাথে গরম রুটি । গ্যাস্ট্রোনমিক আনন্দে উদরপূর্তি । 
 

১৯শে মে ২০১২
পাহাড়চূড়োয় বরফ । বরফচূড়োয় রোদ পড়েছে । মেঘমুক্ত আকাশ । গরমজলে স্নান সেরে ব্রেকফাস্ট আর তারপরেই বেরিয়ে পড়া মেঘমুক্ত আকাশের উদ্দেশ্যে । কখন আবার বৃষ্টির কবলে পড়ে যাই । আজ আমরা গাড়ি নিয়ে আবার লিডার উপত্যকায় বেড়াব । নদীকে ছুঁয়ে দেখব ; তার উষ্ণতায় আজ গরমদেশের মানুষের আহ্লাদে আটখানা হবার । 
 ২০শে মে ২০১২

কাশ্মীর ভ্যালি এল ।

 পৃথিবীর সর্বোচ্চ গল্ফকোর্স । ঠুকঠাক গলফ বল মারছে কোনো খেলাড়ি । গাড়ী সেই গল্ফকোর্স কে পাশ কাটিয়ে আরো আরো পাইন আর দেওদারের মধ্যে দিয়ে এসে পৌঁছাল মস আর ফার্ণ ঘেরা কাঠের হোটেল ঘরে । 
গুলমার্গ এডভেঞ্চার  শুরু !
২১শে মে ২০১২
গন্ডোলা অভিযান @ গুলমার্গ    ! লাইন দিয়ে গন্ডোলা রাইডের টিকিট কাটা হল । 

 কেবল কার রোপওয়ে দিয়ে উঠবে পাহাড়ের মাথায় । এখানে তাকে বলে গন্ডোলা রাইড । 
২২শে মে ২০১২
সোনমার্গ অভিযান  ! ছুঁতে হবে বরফকে । টবোগানিং ! অনাস্বাদিত রোমাঞ্চকর অনুভূতি হল । বরফ থেকে গড়িয়ে পড়ার । সেই উঁচু থেকে নীচে ।  
 শ্রীনগর থেকে সোনমার্গের পথ.....
 আনন্দবাজার পত্রিকা, শনিবার ৪ঠা আগষ্ট ২০১২
২৩শে মে ২০১২ 

ডাল লেকের এক হাউসবোটে বন্দী হলাম আপাততঃ দুদিন, দুরাতের জন্য ।  হাউসবোটের মালিক কাশ্মিরী । তার নিজস্ব হাউসবোটের নাম "হোটেল ক্যালিফোর্ণিয়া" !

 সেই হাউসবোটের ডাইনিং টেবিলে বসে গুগল ম্যাপে খোঁজা হচ্ছে আমাদের হাউসবোটের অস্তিত্ব ।
 রাহুল সেই গৃহ নৌকার মধ্যে ঢুকেই বসে পড়েছে ব্লগ লিখতে..
আমার অন্তরে তখন বাজছে সেই গিটারের সুর... বহুযুগ আগে ঈগলস্‌ এর সেই বিখ্যাত গান ।   
কেশর, আখরোট, শিলাজিত, উইলোকাঠের ক্রিকেট ব্যাট আর কাশ্মিরী কাঠের কারুকার্য , শাল-আলোয়ানের এম্ব্রয়ডারি,  আর পশমিনার সম্ভারে এখানকার মানুষজন অনেক প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে বেঁচে রয়েছে । তবে মনে মনে এদের খুব গুমর কাশ্মীর কে নিয়ে, তার ঐশ্বর্য নিয়ে । আর কেনই বা হবেনা ?