Sunday, June 27, 2010

তরাই তুমি


আসছি আসছি করে বহুদিন পর তোমার কাছে যাচ্ছি ।
সেই যাওয়া হল কিন্তু সময় থাকতে যেতে না পারার দুঃখ ভুলতে পারছি না । 
পেরোলাম তোমার গাঁয়ের মুজনাই নদীর ভাঙা পাড়,
পাট শাকের সারি, প্রথম বৃষ্টির আনন্দে তোমার গাঁয়ের মেয়েরা নেমেছে ধানক্ষেতে, হাঁটুজলে কাদায় ঢলঢল যৌবন দেখলাম তাদের ।
শাল-সেগুনের বনে সবুজ আবীর অনেকটাই নিষ্প্রভ দেখছি এবার ।
কি আর করে ! দারিদ্র্য লুটে পুটে খাচ্ছে অরণ্য
উলুখাগড়া, চোরকাঁটা যে যেমন ছিল তেমনি রয়েছে ।
বর্ষার শুরুতে খালবিল লাফিয়ে উঠেছে ।
একমাথা ঘোমটা সরিয়ে জেলেবৌটির সে কি হাসি ।
মাদারিহাট, শিশুবাড়ি, রাঙালিবাজনা, এথেল বাড়ি তারপরেই আমার বাড়ি । কতদিন যাইনি গ্রামে। কতদিন বর্ষা দেখিনি । কতদিন দেখিনি তোমায় ।
তিস্তাও রয়েছে কোল আলো করে । চড়াও রয়েছে তার বুকে ।
জানিনা থৈ থৈ দেখতে পাব কিনা ।
সেই যে আমার পোড়ো গাঁয়ের রঙচটা মনখারপের স্মৃতি,
কত ব্যথা, কত সুখের প্রলেপ ।
আজ জলঢাকার তীর খালি পড়ে আছে জানো ?
হারিয়ে গেছে ময়নাগুড়ির মোড়, হুসনুডাঙার ধানজমির জোড় ।
হারিয়ে গেছে বিভূতিভূষণ, 
হারিয়ে গেছে আরণ্যক! তোমার তরাই লাবণ্য !



Sunday, April 4, 2010

ছুটি

১৯১৪ সালে পূজোর ছুটির পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গয়া থেকে বেলা যাবার পথে রেলওয়ে ওয়েটিংরুমে বসে লিখলেন পথের গান


"পান্থ তুমি পান্থজনের সখা হে,
পথে চলাই সেই তো তোমায় পাওয়া
যাত্রাপথের আনন্দগান যে গাহে
তারি কন্ঠে তোমারি গান গাওয়া"

জানি বিদায়ী ফাগুণের গায়ে এখন চোখঝলসানো চৈতী আগুণ কিন্তু ছুটির অমোঘ আকর্ষণ আমাদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ল গুডফ্রাইডের ভোরে খড়গপুর থেকে বোলপুরের পথে... "তোমায় নতুন করে পাবো বলে" |    দেখা হয়েচে বহুবার চোখ মেলে, তবুও ঘর থেকে দুপা ফেলেই আবার হাঁটি চেনা পথে, আবার নতুন করে আবিষ্কার করি গ্রামবাংলাকে।পথের আকর্ষণে বেরিয়ে পড়ি বারবার, কালের গাড়ি আরোহন করে। লিখে চলি পথের পাঁচালী । ভোর ৬টায় শুরু করি যাত্রা, সঙ্গে একথার্মোস চা, কিছু কুকিস, মাফিন  আর কয়েকটা কচি শশা নিয়ে ।




ন্যাশানাল হাইওয়ে ৬০ ধরে পূবের আলোয় পশ্চিম মেদিনীপুরের পথে, শহর মেদিনীপুরকে পাশ কাটিয়ে জঙ্গলমহলের রাস্তা ধরে । একে একে পড়ল সারি সারি শালগাছ অধ্যূষিত গোদাপিয়াশাল, শালবনী, গড়বেতা ইত্যাদি  গ্রামগুলি, পেরোলাম কংসাবতী আর শীলাবতী নদী । শুনেছি মাওবাদীদের জায়গা এই জঙ্গলমহল ।  সকালের মিষ্টিরোদ এসে পড়েছিল তখন শালবনের মাথায়, বসন্তের কচি সবুজপাতায় । চেনাপথ যেন আরো নবীন সজীবতায় ভরে উঠছিল । 




গড়বেতা পার হয়ে বিষ্ণুপুরের পথে পা বাড়ালাম । এই রাস্তা নাকি  হাতি পার হবার করিডোর  ...বালুচরীর জন্মস্থান, টেরাকোটার ঘোড়ার দেশ, গ্রামবাংলার চালার অনুকরণে তৈরী অত্যন্ত সুন্দর সব  মন্দিরের হাট এই বিষ্ণুপুরে। কত নাম না জানা মন্দির যত্রতত্র বিরাজমান ;  পোড়ামাটির নিখুঁত  স্থাপত্য মন্দিরের গায়ে এখনো শোভা পাচ্ছে । এইখানে হাতি দেখা কাপালে থাকতে হয় ; যাই হোক ভয়ে ভয়ে আমরা নিলাম প্রথম হল্ট,  ধূমায়িত চা আর মাফিন দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারলাম। আবার শুরু পথচলা। এবার বাঁকুড়ার রাস্তা ধরে কিছুক্ষণের মধ্যে স্টেট হাইওয়ে ৯ ধরে বড়জোড়ার পথে.. আবার পেরোলাম শাল-ইউক্যালিপটাসের বন, হাতি পার হওয়ার করিডোর । শুনেছি বরজোড়ার "মন্ডা"  নাকি একটি বিখ্যাত মিষ্টি তবে এখন অনেক নকল বেরিয়েছে তাই সে পথে পা বাড়ালাম না । কিংবদন্তীর আড়ালে লুকিয়ে আছে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন তৈরী হবার সময়কার চিতাবাঘের গল্প।   এখন সেখানে শুধু মেজিয়া পাওয়ার প্ল্যান্টের  ধূসর  ফ্লাই-এশ বহনকারী ট্রাকের সারি। নগরায়ন তথা বিশ্বায়ন তো দূরের কথা এখন শিল্পায়নে ব্রতী হয়ে আমরা  "অরণ্যমেধ"  যজ্ঞে সামিল হয়েছি।


পর্যাপ্ত  ধূসর উড়ন্ত ছাইকে সবুজ পথের সাথী করে আমরা পেরোলাম  দ্বারকেশ্বর আর গন্ধেশ্বরী নদীর সেতু।এই দ্বারকেশ্বর নদী সাহিত্যের পাতায় জনপ্রিয়  বিদ্যাসাগরের জন্য । মায়ের কাছে পৌঁছেছিলেন রাতারাতি দ্বারকেশ্বর সাঁতরে বাঁকুড়া থেকে মেদিনীপুর । বিদ্যাসাগরের মাতৃভক্তি চিরস্মরনীয় ।  সেই কারণে দ্বারকেশ্বর পেরোতেই স্মরণ করলাম তাঁকে।
এরপর  গোল্ডেন কোয়াড্রি ল্যাটারালের কোলকাতা-দিল্লী শাখায়  ওরফে শেরশাহ সুরীর তৈরী গ্র্যান্ড- ট্রাঙ্ক-রোডে  পড়ে  পানাগড় অবধি গিয়ে মোরগ্রাম হাইওয়ের বাঁকে ঘুরে  ইলামবাজারের জঙ্গলে গিয়ে পড়লাম। মধ্যে পেরোলাম অজয় নদী। তারপরেই কবিগুরুর কর্মভূমিতে,  ছাতিম, শিমূল, পলাশের শহর শান্তিনিকেতনে।  বসন্ত নেই এখন আছে চৈতীর চোখ ঝলসানি রোদ আর রাতে একটু ঠান্ডা হাওয়া ।শ্র্রীনিকেতন, বিশ্বভারতীর আশ্রম পেরিয়ে বনপুলক, শ্যামবাটি, তালতোড়কে  সরিয়ে রেখে আমরা দুপুর সূর্যকে মাথার ওপরে রেখে পৌঁছলাম  প্রান্তিক। আমাদের "সোনারতরী" ফেজ ১, আবাসনের ক্ষুদ্র বাগান বাড়ি যার নাম "কৃষ্ণকলি" । রবীন্দ্রনাথ ছাড়া ভাবতে পারিনা এখানকার কোনোকিছুকেই তাই বাড়ির নাম করণেও রাবিন্দ্রীক হয়ে পড়েছিলাম।


বাড়ির পাশেই ক্যানালের জল বয়ে চলেছে । যদিও ভরাবর্ষায় এই জলের অমোঘ আকর্ষণ আমাকে আরো টানে। সোনাঝুরির ছায়ায় প্রান্তিকের বনবীথি যেন ঘুরে ফিরে নতুন করে ধরা দেয় আমার কাছে। অনতিদূরে কংকালিতলায় মাকালীর মন্দিরের আকর্ষণও দুর্নিবার ।  ৫ সতীপিঠের একটি এটি; দক্ষযজ্ঞের সময় সতীর খন্ড দেহাংশের কাঁখাল অর্থাত কোমরের অংশ বিশেষ পতিত হয় এখানে ...একটি কুন্ডে। আর পাশে উত্তরমুখে প্রবাহিনী কোপাই নদী সংলগ্ন এলাকায় শ্শ্মশান । আমি এই জায়গায় এলে কিছু মাহাত্ম্য অনুভব করি।  


প্রতি শনিবারে খোয়াইয়ের পথে হাট বসে । এটি ও আর কোথাও দেখিনি। সূর্যাস্তের ঠিক ঘন্টা দুয়েক আগে থেকে বসে এই হাট। কত শিল্পীরা নিজ নিজ শিল্পের পসরা সাজিয়ে বসেন সেখানে আর সাথে থাকে বাউলের গান । রাঙামাটির পথ ধরে আমরাও পৌঁছে যাই সেখানে । ডোকরার গয়না, কত রকম ফলের বীজ দিয়ে তৈরী গয়না, কাঁথার কাজের বাহার, পটশিল্প,  বাউলগানের আনুষাঙ্গিক বাদ্যযন্ত্র, তালপাতা, পোড়ামাটির কাজ, বাটিকের কাজ আরো কত কিছু এনে তারা বিক্রি করে । কিন্তু অন্ধকার হবার পূর্বমূহুর্তেই পাততাড়ি গোটাতে হয় তাদের ।  


এই নিয়ে আমাদের ২৪ বার যাওয়া হোল শান্তিনিকেতন । তবুও সে পুরোণো হয় না। আমি কিন্তু কোলকাতার হুজুগের  আম জনতার মত পৌষমেলায় কিম্বা বসন্ত উত্‌সবে আসি না এখানে । কারণ ভীড় আমার ভালো লাগেনা । দু একবার দেখেছি পৌষমেলা, গেছি বসন্ত উত্‌সবে । কিন্তু আমাদের চিরসখা "নিরালা" কে তখন পাইনা,  কাব্যের উঠোনে হোঁচট খেতে হয়,  ব্লগের আঙিনায়  নতুন পোষ্টের জন্য কল্পলোকের ইশারা থাকেনা । এখানে আসি লিখতে, ভাবতে, লেবু ফুলের গন্ধ নিতে, পলাশের একটুকু লালকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে আর সর্বোপরি মাস তিনেকের বাঁচার রসদ আর শ্বাসবায়ু নিতে।  আমার ছোট্টবাগানের ফুলেদের সাথে কথা বলে আসি । পাখিদের সাথে গান গেয়ে যাই ।  আর খবর নিয়ে যাই কৃষ্ণকলির, তাকে ভালো থাকতে বলি,  সবুজে আর নীলে মিশে সুন্দর থাকতে বলি ।

Wednesday, February 24, 2010

তুলনাহীনা রে

 (পর্ব ৪)

আমার কল্পনাট্যের কুশীলব  সে ফাগুনের এক ভোরে 
বায়ুপথে পাড়ি দিল ডালাস থেকে নিউইয়র্ক 
সেখান থেকে একটা গাড়ি নিয়ে সোজা ওয়াশিংটন ডিসির রাজপথে.. 
ডিসির রাজপথ হোয়াইট হাউসের রাজকীয় শুভ্রতায় কি অসাধারণ শন্তিময়তা 
বাইরের সবুজ লনে কি সুন্দর সজীবতা সাথে গেরুয়া মরশুমি ফুলের উজ্জ্বলতা 
এই তিন রঙ মনে করিয়ে দিল  তার নিজের দেশমাতৃকার কথা, 
মনে মনে সে প্রনাম জানাল তার নিজের ত্রিরঙাকে..
ক্যাপিটল হিলের কাছে লিংকন মেমোরিয়াল 
চির শুভ্রতায় জ্বাজ্জল্যমান  এব্রাহাম লিংকনের স্মৃতি নিয়ে,  
সেখান থেকে  ন্যাশানাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে 
সেই বহু বিতর্কিত এবং অভিশপ্ত হোপ ডায়মন্ড দেখে আসে তারা 
ন্যাশানাল গ্যালারি অফ আর্ট থেকে এয়ার এন্ড স্পেস মিউজিয়ামে এল 
তারা ঝুলন্ত ছোট বড় কত কত উড়োজাহাজের মডেল, আর তার বিবর্তন 
তার মধ্যে থেকেই উঠে এল স্মৃতির মণিকোঠা থেকে 
রাইট ব্রাদার্সের হাতে তৈরী প্রথম প্লেনের মডেল 
ক্লাস নাইনের ফিসিক্স ব‌ইয়ের সেই ছবি 
আজ ত্রিমাত্রিক মডেল হয়ে ঝুলছে চোখের সামনে 
সাময়িক বাকরূদ্ধতা !
ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশানাল গ্যালারী অফ আর্ট এ এসে পৌঁছায় তারা 
বহু প্রতিক্ষীত ভাবনালোকের রূপসাগর
তারা ডুব দিল সেই রূপসাগরে 
ইম্প্রেশানিস্ট, স্যুরিয়ালিস্টিক সবরকমের পেন্টিংয়ের সাথে হাতেখড়ি হল তার ! 
Matisse, Rennoir, Claude Monet, Van Gogh, Paul Gauginর গল্পে 
মাত হয়ে গেছিল আর্ট গ্যালারির প্রতিটি করিডোর ! 
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হোল Da Vinciর আর এক বিরল সৃষ্টি দেখে 
যা মোনালিসার থেকে কোন অংশে কম নয় 
মোনালিসার হাসি নেই তাতে কিন্তু সেই ভয় মিশ্রিত গাম্ভীর্য্য 
অনবদ্য লাগল তাদের 
বিদায়ের সময়  মনে হল 
ডিসি তুমি দিগবসনা, সবুজ আঁচল শুভ্ররাজবেশে ছড়িয়ে দিয়েছো নীলের দিগন্তে 
সৌন্দর্য তোমার অলংকার, রাজকীয়তা তোমার মজ্জাগত, নিয়ম শৃঙ্খলা তোমার সহজাত, 
বেঁচে থাকো ডিসি তোমার অমলিন স্বর্গীয় রাজকীয়তা নিয়ে

Monday, January 25, 2010

নয়নভুলানো এলে

পর্ব (৩)

একদিন তারা পাড়ি দিল  লুইসিয়ানা স্টেটের পুরোণো শহর নিউঅর্লিন্সের পথে,
ফ্রেঞ্চকোয়ার্টার ছিল এককালে, তাই ফরাসী ঐতিহ্য বহমান এখনো রাস্তার মাঝে
ধারে ধারে ক্ষুদে চিত্রশিল্পীদের শিল্পকলা, বাদ্যশিল্পীর জ্যাজ অনুশীলন,
প্রাসাদোপম অট্টালিকার আধুনিক বুটিকে রূপান্তকরণ 
যেন অধুনা অমুক নং বালিগঞ্জ প্লেস অথবা তমুক নং ল্যান্সডাউন টেরেসে
নামজাদা ডিজাইনার বুটিক!
আর  নয়নভোলানো সব আর্টগ্যালারি,
মিসিসিপি বক্ষে ভেসেছিল সেদিন দুজনে.. 

ভূগোল ব‌ইয়ের ইতিহাস আজ তার সামনে দিয়ে বয়ে চলেছে
স্রোতের সুর তুলে নীলঘাগরার কুঁচি লুটিয়ে,
মিসিসিপির ডেকে বসে দেখেছিল সূর্যাস্তের লাল রঙ
ওপারের সেন্ট পিটার্স ক্যাথিড্রাল সাক্ষী হয়ে দেখেছিল সে বিকেলে
প্রেমের পরব !
চমকে গিয়েছিল তারা নিউঅর্লিন্সের বুকে লাল ট্রাম দেখে,
মজার শহর নিউঅর্লিন্স সকলে নিজের খেয়ালখুশিতে চলে
কোনো সময়ের অভাব নেই, নেই কোনো একঘেয়েমি 
কোনোবাড়ির পোর্টিকোতে গীটারে জ্যাজ বাজায় তরুণ,
কোথায় আবার বিউগল বাজিয়ে ভিক্ষা চাইছে যুবক,
কোথাও আবার একর্ডিয়ানে সুর তুলতে ব্যস্ত কোনো শিল্পী
সেন্টপিটার্স স্কোয়ারে নামা-অনামা কত শিল্পীর চিত্র প্রদর্শনী চলছে,
যেন  ফ্রান্স শহরের পুরোনো সাবেকিয়ানা এখনো ব‌ইছে 
নিউঅর্লিন্সের কোণায় কোণায়,
শহরের প্রাণকেন্দ্র ল্যাটিন কোয়ার্টার "Vieux Carre" 
আজও ফরাসীয়ানায় অমলিন
রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ি, সাবেকি স্ট্রীটল্যাম্প 
বিখ্যাত বুরবন স্ট্রীট আজও ব্যস্তময়!বর্ণময় 
সেদিন  টেকিলা উইথ মার্গারিটা খাইয়েছিল, 
এখানকার বিশেষ পানীয় 
 প্লেটে সুসজ্জিত কেজুন রাইস আর ক্রফিস কারি নিয়ে 
তারা পৌঁছে গেছিল পার্কস্ট্রীটের চাইনিস রেস্তোরাঁয়, এক নস্টালজিয়ায়....
মিসিসিপিকে বিদায় জানাতে বড় কষ্ট হয়েছিল ,
মনে মনে বলেছিল ঠিক এমন করেই থেকো তুমি যেমন আজ আছো,
তোমার আকাশ আমার আকাশের চেয়েও নীল দেখে যাচ্ছি
তোমার জলের রং আমার চোখের তারায় ধরে নিয়েছি
তোমার আকাশে সেদিন দেখেছি পড়ন্ত সূর্য়ের লাল-কমলার খেলা
জলের ওপরে সেই ছায়া আর তার ওপরে আমাদের ছবি
তা তুমিও কিন্তু রেখো ধরে সুন্দর করে.. 
শহর নিউঅর্লিন্সকে বলেছিল যদি তুমি হারিয়ে যাও একদিন
যদি কোনো বিধ্বংসী ঝড় এসে তোমায় গ্রাস করে নেয় 
তোমার ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না,
তুমি হয়ত তলিয়ে যাবে 
কিন্তু আমার মনের ক্যানভাসে তুমি বেঁচে থাকবে চিরসুন্দর হয়ে 
 

Thursday, January 21, 2010

মধুবসন্ত

পর্ব ১
প্রেমের জোয়ারে 
 

১৯৮৯ র ফাল্গুন, ২৩য়ের উদ্ভিন্নযৌবনা , 
অষ্টমঙ্গলা সেরে মধুচন্দ্রিমা...
সুদূর ডালাসে পাড়ি দেওয়া,
অপরিচিত, অজানা অথচ অতি কাছের
জীবনের প্রথম প্রেমিকের সাথে,
বহু প্রতীক্ষিত বায়ুপথে ভ্রমণ..
বিমানবন্দর থেকে একে একে চোখের বাইরে চলে গেল
মা, বাবা আর ভাইয়ের ছলছল চোখ, 

চোখে তখন আনন্দাশ্রু,
নিমেষে কষ্ট উধাও.. 
হাত ধরল কাছের মানুষটি,
অনাবিল আনন্দে হারিয়ে গেল তারা । 
 

বিশ্বভরা প্রাণ 

আমেরিকার মাটিতে পা দিয়েই  মনে হল
ঈশ্বরের আশীর্বাদ ধন্য এই দেশ,
কত সুন্দর সৌজন্যবোধ মানুষের, সুন্দরের সত্য পূজারী তারা,
তারা কত রুচিশীল, সত্যিই তারা গড়তে জানে নিজেদের
আর ভালবাসে তাদের দেশকে, 
রক্ষা করতে পারে ভগবানের সৃষ্টিকে,
আর নিজেদের সৃজনশীলতাকে বিকশিত করে,
উজাড় করে দিতে পারে বিশ্বের দরবারে;
তুমি বলবে কৃত্রিমতা এ শতাব্দীর অভিশাপ
কৃত্রিমতা যদি উন্নতি ঘটায় তাহলে বাধা কোথায়?
বিজ্ঞান যদি কাজের বন্ধু হয় তাহলে আপত্তি কিসে ?
সৃষ্টিসুখের উল্লাসে আমরা বাঁচিনা একটু সহজ করে, সাবলীল ভাবে!
আসলে যে দেশের নাগরিকের চিন্তাধারা সুস্থ, যারা সভ্যতায় পরিপুষ্ট,
বিধাতাপুরুষ বোধ হয় দুহাত তুলে তাদের আশীর্বাদ করেন..
প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য্যে, প্রাকৃতিক জলবায়ুর মিষ্টতায় 
 সে দেশের মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে রোজ তারা প্রণাম জানায় 
নিজের দেশমাতৃকাকে|
পর্ব ২
ধরা দিয়েছি গো  
 
ভোরবেলা  কিচেনের ব্লাইন্ডস সরিয়ে
ক্লিফব্রুক কন্ডোমিনিয়ামসের পার্কিং লটে তাকিয়ে থাকা
সার সার গাড়ির ছাদে দুধসাদা বরফের চাদর
তার সাথে সূর্যের আলোর মাখামাখি,  
সেই জানলা দিয়েই রোজ  বাই করা,
২৭য়ের সুপুরুষ ম্যানেজমেন্ট স্কুলে তখন,
দুপুরবেলা বান্ধবীদের সাথে শপিংমলের হাতেখড়ি  
একরাশ বিদেশী পারফিউমের গন্ধ নিয়ে ফিরে আসা,
বিকেল হলেই নতুন জলখাবার তৈরী আর  প্রতীক্ষা...
তারপর  রোজ চোখ রেখেছে অপার বিস্ময়ে,
কখনো ডালাস ডোমের মাথায় গরম কফি হাতে,  
কখনো টাইলার রোজ গার্ডেনের গোলক ধাঁধায়,
কখনো নেচে উঠেছে তার প্রাণ টার্নার ঝোরার ধারে,
গুহার ভেতর জাপটে ধরেছে তার সঙ্গী মনের মানুষটিকে,
গেয়ে উঠেছে মুক্তির আনন্দে, নেচে উঠেছে ঝোরার জলের ছন্দে,
ল্ংড্রাইভে এল্.বি.জে এক্সপ্রেস ওয়ের ওপর
কতবার ছুটেছিল তাদের সাদা মাজদা ৬২৬ 

খোলাচুল উড়ে এসে পড়েছিল তার প্রিয় পুরুষটির কাঁধে
ডালাসের ফাগুনে সেদিন ছিল  প্রেমের আগুণ, প্রাণের মূর্ছনা   
রিচার্ডসনের রাস্তা, প্লেনোর পথঘাট সে ফাগুনে দেখেছিল নতুন বসন্ত  (ক্রমশঃ)

Wednesday, October 21, 2009

মরুভ্রমণ যদিও অধরা তবুও মধুর!!!


আসলে সেই অর্থে মরুভ্রমণ হয়নি এবার। আমার ছেলে রাজস্থানের একটি কলেজে এই বছর ভর্ত্তি হয়েছে...তাই সে তো আসতে পারবে না ...তাই আমাদের যাওয়া..তবে কলকাতার ভীড় ছেড়ে পালিয়ে কিছু খারাপ লাগেনি..বরং একটু অন্যরকম দীপাবলী হল এবছর । ময়ূর, টিয়াপাখি, বকের সারি, নিম গাছের এভিনিউ, ঊটের সঙ্গে পথ হাঁটা, কাঠবেড়ালির পায়ে পায়ে লুকিয়ে পড়া, এই সব আর কি ...মাটি থেকে ২৫০ মিটার উঁচুতে সংকটমোচন মন্দির দেখতে গেলাম । বাজিপোড়ানো দেখলাম কলেজের ক্যাম্পাসে । প্রচুর আলো দিয়ে সাজানো কলেজের ঘড়ি-স্তম্ভ...আলো আলো আর শুধু আলোর রোশনাই ..কিন্তু সাথে নীরবতা..এক অপূর্ব নৈসর্গিক শান্ত প্রকৃতি। সকাল হলেই নতুন ঠান্ডা হাওয়ার ছোঁয়া আর কর্কশ কেকাধ্বনি যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল আলস-লালস পসরা সাজিয়ে শীতের আগমনবার্তা । আমার ছোটবেলায় বাবা মায়ের সাথে রাজস্থান ঘোরা কিন্তু এই বয়সে স্বামী-পুত্রের সাথে ছোট্ট এই গ্রামের মাঝে দিন কয়েক ঘুরে এসে ...কত পাখির কলরব শুনে, কত বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মনে পড়ে গেল..আমি বিন্দুতে সিন্ধুদর্শন করলাম !

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,
একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু!!!!