Monday, January 25, 2010

নয়নভুলানো এলে

পর্ব (৩)

একদিন তারা পাড়ি দিল  লুইসিয়ানা স্টেটের পুরোণো শহর নিউঅর্লিন্সের পথে,
ফ্রেঞ্চকোয়ার্টার ছিল এককালে, তাই ফরাসী ঐতিহ্য বহমান এখনো রাস্তার মাঝে
ধারে ধারে ক্ষুদে চিত্রশিল্পীদের শিল্পকলা, বাদ্যশিল্পীর জ্যাজ অনুশীলন,
প্রাসাদোপম অট্টালিকার আধুনিক বুটিকে রূপান্তকরণ 
যেন অধুনা অমুক নং বালিগঞ্জ প্লেস অথবা তমুক নং ল্যান্সডাউন টেরেসে
নামজাদা ডিজাইনার বুটিক!
আর  নয়নভোলানো সব আর্টগ্যালারি,
মিসিসিপি বক্ষে ভেসেছিল সেদিন দুজনে.. 

ভূগোল ব‌ইয়ের ইতিহাস আজ তার সামনে দিয়ে বয়ে চলেছে
স্রোতের সুর তুলে নীলঘাগরার কুঁচি লুটিয়ে,
মিসিসিপির ডেকে বসে দেখেছিল সূর্যাস্তের লাল রঙ
ওপারের সেন্ট পিটার্স ক্যাথিড্রাল সাক্ষী হয়ে দেখেছিল সে বিকেলে
প্রেমের পরব !
চমকে গিয়েছিল তারা নিউঅর্লিন্সের বুকে লাল ট্রাম দেখে,
মজার শহর নিউঅর্লিন্স সকলে নিজের খেয়ালখুশিতে চলে
কোনো সময়ের অভাব নেই, নেই কোনো একঘেয়েমি 
কোনোবাড়ির পোর্টিকোতে গীটারে জ্যাজ বাজায় তরুণ,
কোথায় আবার বিউগল বাজিয়ে ভিক্ষা চাইছে যুবক,
কোথাও আবার একর্ডিয়ানে সুর তুলতে ব্যস্ত কোনো শিল্পী
সেন্টপিটার্স স্কোয়ারে নামা-অনামা কত শিল্পীর চিত্র প্রদর্শনী চলছে,
যেন  ফ্রান্স শহরের পুরোনো সাবেকিয়ানা এখনো ব‌ইছে 
নিউঅর্লিন্সের কোণায় কোণায়,
শহরের প্রাণকেন্দ্র ল্যাটিন কোয়ার্টার "Vieux Carre" 
আজও ফরাসীয়ানায় অমলিন
রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ি, সাবেকি স্ট্রীটল্যাম্প 
বিখ্যাত বুরবন স্ট্রীট আজও ব্যস্তময়!বর্ণময় 
সেদিন  টেকিলা উইথ মার্গারিটা খাইয়েছিল, 
এখানকার বিশেষ পানীয় 
 প্লেটে সুসজ্জিত কেজুন রাইস আর ক্রফিস কারি নিয়ে 
তারা পৌঁছে গেছিল পার্কস্ট্রীটের চাইনিস রেস্তোরাঁয়, এক নস্টালজিয়ায়....
মিসিসিপিকে বিদায় জানাতে বড় কষ্ট হয়েছিল ,
মনে মনে বলেছিল ঠিক এমন করেই থেকো তুমি যেমন আজ আছো,
তোমার আকাশ আমার আকাশের চেয়েও নীল দেখে যাচ্ছি
তোমার জলের রং আমার চোখের তারায় ধরে নিয়েছি
তোমার আকাশে সেদিন দেখেছি পড়ন্ত সূর্য়ের লাল-কমলার খেলা
জলের ওপরে সেই ছায়া আর তার ওপরে আমাদের ছবি
তা তুমিও কিন্তু রেখো ধরে সুন্দর করে.. 
শহর নিউঅর্লিন্সকে বলেছিল যদি তুমি হারিয়ে যাও একদিন
যদি কোনো বিধ্বংসী ঝড় এসে তোমায় গ্রাস করে নেয় 
তোমার ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না,
তুমি হয়ত তলিয়ে যাবে 
কিন্তু আমার মনের ক্যানভাসে তুমি বেঁচে থাকবে চিরসুন্দর হয়ে 
 

No comments:

Post a Comment