Showing posts with label shankarpur. Show all posts
Showing posts with label shankarpur. Show all posts

Sunday, April 10, 2011

সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়ের শঙ্করপুর

দৈনিক স্টেটসম্যান, রবিবার  ১০ই এপ্রিল ২০১১  

পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর থেকে পূর্ব মেদিনীপুরে বঙ্গপোসাগরের  সমুদ্রতট শঙ্করপুরে গিয়েছিলাম কালীপুজোর আগের দিন ।  অমাবস্যার ভরাকোটালের ঠিক পূর্ব মূহুর্তে পৌঁছেছিলাম আমরা । খড়গপুর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ । গাড়িতে যেতে সময় লাগে ঘন্টা তিনেক । কারণ বেশির ভাগ রাস্তাই গ্রামের মেঠো পথ । সকালে বেরিয়েছিলাম বেলা এগারোটায় । প্রথমে পেরোলাম গোপালি গ্রাম তারপর কাশীজোড়া, শংকরাচকের ভেতর দিয়ে বেনাপুর গ্রামে পৌঁছে লেবেল ক্রসিং পেরিয়ে ঊড়িষ্যার বালেশ্বর যাওয়ার বড় চওড়া রাস্তা ধরা হল । রাস্তার দুপাশে   সবুজ ধানক্ষেত যেন আমাদের জন্য সবুজ গালচে বিছিয়ে রেখেছিল  । কাঁচা আর পাকা দু'রকমের ধানের ফলনেই যেন পাগল হয়ে রয়েছে কার্তিকের বাংলা ।  কি জানি কেবলই মনে হতে লাগল মা দুর্গার  আগমনেই বুঝি   এবার বাংলার মাটির রঙে সবুজ আর হলুদ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে । এবার ঐ বালেশ্বর যাওয়ার পথ থেকেই আমরা ধরে নিলাম গোল্ডেন কোয়াড্রিল্যাটারালের দক্ষিণ অভিমুখী শাখাকে । তখন আরো গতিশীল হল আমাদের যাত্রাপথ । অচিরেই পৌঁছলাম বেলদা ।বেলদা থেকে এক্সপ্রেস ওয়েকে বিদায় জানিয়ে গ্রামের মেঠো পথের রুক্ষতা নিয়ে চলতে হল । এই স্ট্রেচটি খুব খারাপ । এবড়োখেবড়ো রাস্তা। গাড়ির স্পীড কমে গেল । কিছুক্ষণ পর পৌঁছলাম এগরা । তখন গাড়ির অডিওতে বেজে চলেছে "আমাকে আমার মত থাকতে দাও...."  যেন রূপসী বাংলার মনের গোপন কথাগুলো   । গ্রামগুলির চেহারা পশ্চিমবাংলার আর পাঁচটা গ্রামের মত । কালীপুজোর চাঁদার জুলুমের খপ্পরেও পড়লাম বার দুয়েক । এ জায়গাটায় ধানক্ষেতও যেমন আছে তেমনি আছে  ভরাবর্ষার পর খালের জলে ফুটে থাকা সার সার কচুরীপানা, শাপলা-শালুক।   সূর্য তখন মাথার ওপর থেকে সরে পশ্চিম আকাশের গায়ে । পূর্ব মেদিনীপুরের পাণিপারুল গ্রামে এলাম । সেখান থেকে রামনগর ।  চম্পানদীর ব্রিজ পেরিয়ে  ঢুকলাম শঙ্করপুরে । এখানে  মাটির রঙ লাল, জলের রঙ নীল । গাঢ় সবুজ ক্যাসুরিনা ঝাউবনের করিডোর দিয়ে প্রবেশ করলাম শঙ্করপুরের নির্জনতায়। কম ও বেশী সবরকম বাজেটের  সুন্দর সুন্দর হোটেল আছে ।  হোটেলে মালপত্র রেখেই বেরিয়ে পড়লাম সমুদ্রদর্শনে ।  যাবার সময় হোটেলে মাছ-ভাতের অর্ডার দিয়ে যাওয়া হল । শঙ্করপুরে এত সুস্বাদু ফ্রেস ওয়াটার বাগদা চিংড়ি পাওয়া যায় যে শুধু মাছ আর ভাত খেলেই পরিতৃপ্তি হয় আর হোটেলের রান্নাও খুব সুন্দর । সে কৃতিত্ত্ব বোধ করি মেদিনীপুর জেলার অভিজ্ঞ পাচকের । 
সাদাবালির চরে গিয়ে একলহমায় সমুদ্র তট দেখে মনে হল 
একটা বিকেল নেবে তুমি? 
দিতে পারি তবে, 
যার নোনা জলের সাদাফেনায় ছুটে আসা 
জলের ফোঁটার রঙ সাদা, 
যার সাদা উড়নি নোনতা স্বাদের, 
ঢেউয়ের পরে ঢেউয়ের আনাগোনায় 
আছড়ে পড়া বালির চরে আসর বসায় 
মুঠো মুঠো ঝিনুক, তারা মাছ, শঙ্কর মাছেরা, 
দলবেঁধে আসা বকের সারি উড়ে যায় 
ক্যাসুরিনার ফাঁক দিয়ে, 
খেয়ে যায় বাঁশপাতা মাছ সমুদ্রের তট থেকে, 
ঢেউ এসে নিয়ে যায় বিকেলের সূর্যাস্তের রং  । 
সব মনখারাপের দুপুরগুলো আছড়ে পড়ে সেই ঢেউতে । 
ক্লান্ত  সূর্য তখন আপন মনে রঙ ছড়িয়ে চলেছে পূর্ব মেদিনীপুরের পশ্চিম আকাশের গায়ে, রং ছড়াতে ছড়াতে অবসর নিতে চলেছে সেদিনের মত ।  বিশাল সমুদ্র তট ; কাছেই  দীঘার চেয়ে অনেক পরিষ্কার আর মন্দারমণির চেয়ে অনেক বেশি প্রাকৃতিক শংকরপুরের বিচ । সমুদ্রের জলে নেমে পা ভিজিয়ে জল আর স্থলের দৃশ্য উপভোগ করলে তো আর পেট ভরে না । তাই হোটেলে ফিরে সেই অর্ডার দেওয়া চিংড়িমাছ আর গরম ভাত খেয়ে নিয়েই আবার ফিরে এলাম বঙ্গোপসাগরের তটে ।  ঝিলিক দেওয়া জলের মধ্যে চকচক করা ঝিনুক ঝাঁকে মুক্তো খুঁজে বেড়াই আবার ।  ভূত চতুর্দশীর সন্ধ্যেবেলা । ছমছমে সমুদ্রতটে শুধু ঢেউয়ের গর্জন । কোটালের ভয়াবহতা জানি । জল ফুলতে থাকে ক্রমশ:  । তবুও যতক্ষণ সুয্যি র‌ইল আকাশের বুকে ততক্ষণ পা ডুবিয়ে জলখেলা হল । আমাদের সাথে ছিল একটি বছর চারেকের বাচ্ছা । সে তো জল থেকে উঠতেও চায় না । তাকে টেনে হিঁজড়ে তোলা হল তখন সমুদ্রতট অন্ধকার । সারসার মাছের নৌকা (ট্রলার)  তখন মাঝ দরিয়ায় যাচ্ছে জাল ফেলতে, অমাবস্যার কোটালে মাছের প্রাচুর্য্যকে উপেক্ষা না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দেয় তারা ।  ভোর রাতে নৌকাগুলি তীরে এসে নোঙর করে । জেলেরা তখন মাছ বোঝাই নৌকা থেকে মাছ গুলো বিক্রি করে বাজারিদের কাছে । দেওয়া নেওয়ার টানাপোড়েনে কত রকমের সামুদ্রিক মাছ পড়ে যায় প্রতিদিন সমুদ্রের বালিতে আর জল সরে গেলে সে গুলি পড়েই থাকে তেমনি করে শুকনো বালুকাবেলায় । ছোটদের নিয়ে গেলে তারা মজা পাবে । দেখে উপভোগ করবে কত স্টার ফিস, বাঁশপাতা মাছ, লম্বা লেজ ওয়ালা শংকর মাছ, গায়ে সাদা কালো টিপ ওয়ালা বোয়াল মাছের মত গড়নের নাম না জানা মাছ  আর সেই সাথে নানা রকমের ঝিনুক কুড়োনোর মজা আছে শংকরপুরে  । অন্ধকার ভোরে কত রকমের শাঁখ আসে ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে । আর সূর্যাস্তের সময় ঘন নীল আকাশের গায়ে লাল, কমলা গোলাপি আভা ছিটিয়ে সূর্য যখন অস্তে চলে তখন সাক্ষী হয়ে থাকে সেই অভিনব ক্যাসুরিনা ঝাউবন । আদি অনন্ত কাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে তারা । প্রতিদিন সূর্যের এই অবসর নেওয়ার মূহুর্তে ঝাউবনে  পাখ-পাখালির ঘরে ফেরার  কলরব আর বালির চরে ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার শব্দ,  নিঝুম নিসর্গকে নতুন করে পৌঁছে দেয় মনের আঙিনায় ।  সূর্যাস্তে শঙ্করপুর একরকম । আর সূর্যোদয়ে অন্য রকম ।  
রাতে হোটেলে ফিরে ছাদে গিয়ে আবার সমুদ্র, কালো সমুদ্র, শব্দমুখর সমুদ্রকে চুপিচুপি দেখে আসি ।  পরদিন ভোরে সাড়ে চারটের সময় এসে হাজির হ‌ই সমুদ্রের বালুকাবেলায় । অন্ধকার আকাশে উত্তরদিকে তখনো ধ্রুবতারা আর পশ্চিম আকাশে শুকতারা জ্বলজ্বল করছে । ঢেউয়ের আনাগোনা দেখি,  সমুদ্রের বুকে জন্ম নেয় নতুন ঢেউ আর তীরে এসে ভাঙে সেই ঢেউ । দেখতে দেখতে পুব আকাশের গায়ে রঙ ছেটাতে আসে প্রত্যূষের বালক সূর্য । আকাশ চিরে চিরে লাল, নীল, গোলাপী রঙের দাগ আর লুকোচুরি খেলতে খেলতে সেই আবীর রঙা আকাশের কোল থেকে উঁকি মারে সে । ধীরে ধীরে ওপরে ওঠে । শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের দাপট দেখাবে বলে । তখন ঠিক পৌনে ছটা বাজে । অনেক সূর্যোদয় দেখেছি । শঙ্করপুরের নিরিবিলির সানরাইজ মনের ক্যানভাসে ধরে রাখতে পেরেছি ঠিক মত ।  পুজোর পর থেকেই উইকএন্ডে ভীড় হয়ে যায় শঙ্করপুরের সি বিচ পিকনিক পার্টির আক্রমণে । নষ্ট হয় এর ইকোফ্রেন্ডলি প্রাকৃতিক সম্পদ, দূষিত হয়ে যায় ঝাউবন আর পর্যাপ্ত প্লাস্টিকে পূর্ণ হয়ে যায় সমুদ্রতট।  তাই উইকের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে মাত্র চব্বিশটা ঘন্টা হাতে নিয়ে ঘুরে আসা যেতেই পারে শঙ্করপুর !

Friday, November 12, 2010

শান্ত-স্নিগ্ধ শঙ্করপুরের সমুদ্রতটে











The Sandy Bay Hotel : Excellent place to stay when you are here



একটা বিকেল নেবে তুমি?
যার নোনা জলের সাদাফেনায় ছুটে আসা জলের ফোঁটার রঙ সাদা
যার সাদা উড়নি নোনতা স্বাদের ঢেউয়ের পরে ঢেউয়ের
আনাগোনায় আছড়ে পড়া বালির চরে আসর বসায়
মুঠো মুঠো ঝিনুক তারা মাছ, শঙ্কর মাছেরা,
দলবেঁধে আসা বকের সারি উড়ে যায় ক্যাসুরিনার ফাঁক দিয়ে,
খেয়ে যায় বাঁশপাতা মাছ সমুদ্রের তট থেকে,
ঢেউ এসে নিয়ে যায় বিকেলের সূর্যাস্তের রং ।
সব মনখারাপের দুপুরগুলো আছড়ে পড়ে সেই ঢেউতে ।
ক্লান্ত সূর্য তখন আপন মনে রঙ ছড়িয়ে চলে পশ্চিম আকাশের গায়ে,
রং ছড়াতে ছড়াতে অবসর নেয় ঠিক আমার মত
যখন আমার ইচ্ছেডানায় ভর করে সাগর-স্বপ্নেরা...