Showing posts with label Hongsheswari temple Bansberia. Show all posts
Showing posts with label Hongsheswari temple Bansberia. Show all posts

Monday, June 11, 2012

বিপন্ন বাঁশবেড়িয়ায়


কোলকাতা ছেড়ে আমরা তখন বিটি রোড ধরেছি । হুগলীর বাঁশবেড়িয়ায় আমার শ্বশুরমশাইয়ের পিতামহ শ্রী সত্যচরণ মুখোপাধ্যায়ের তৈরী বসতভিটে পরিদর্শনে । একে একে পেরোলাম বালি, উত্তরপাড়া, কোন্নগর, ভদ্রকালী, রিষঢ়া, শ্রীরামপুর পেরোতে পেরোতে জৈষ্ঠ্যের রোদ তখন প্রায় আলম্ব মাথার ওপর । তারমধ্যেই শহরতলীর বাজারে হৈ হৈ করে বিকোচ্ছে আম-কাঁঠাল-লিচু । রবিবারের সরগরম বাজারে ঠা ঠা রোদেও বিকিকিনির খামতি নেই ।
জিটি রোড ছেড়ে এবার পুরোণো দিল্লী রোড ধরে সোজা মগরা হয়ে বাঁশবেড়িয়া । হংসেশ্বরী রোড ধরে রঘুদেবপুরে থামা ।
দেড়শো বছরের পুরোণো মুখুজ্যে বাস্তুভিটে এখন জঙ্গলাকীর্ণ । লোকাল ক্লাব, লোকনাথ বাবার মন্দির গড়ে উঠেছে এই জমিতেই । 

দোতলাবাড়ি ভেঙে গেছে বহুদিন আগেই ।জানলা দরজা ভেঙে ভেঙে নিয়ে গেছে কেউ । কড়িবরগার ছাদের নীচে একতলায় বাস করছে তিনটি পরিবার । পাশে দুটো পুকুরে এখনো জল থৈ থৈ । সংলগ্ন বাড়ি উঠেছে আমাদের জমির ওপর দিয়েই । প্রকান্ড বাড়ির সামনে বারমহল এখনো কিছুটা ভগ্নাবস্থায় দাঁড়িয়ে । পাশে ছিল উঁচু করা খানিক জমি যেখানে প্রতিবছর জগাদ্ধাত্রী পুজো হত ।
এখন পরিত্যক্ত ভিটের কুলুঙ্গিতে চামচিকের আনাগোনা । ক্লান্ত দুপুরে এ ভিটে হয়ে ওঠে নিঃসঙ্গ কুবো-ঘুঘুদের ছায়াসাথী ।  পোড়া ইঁটের সুরকি নিয়ে রান্নাবাটি জমিয়ে দেয় পাড়ার ছোট ছেলেমেয়েরা ।  বারমহলের লবি চু-কিত্কিত প্রেমীদের অবারিত দ্বার ।  


 এরপর যাওয়া হল হংসেশ্বরী মন্দির ।  


পুরোণো হুগলীজেলার শিল্পনগরী ব্যান্ডেল এবং ত্রিবেণীর মাঝামাঝি অবস্থিত হংসেশ্বরী মন্দির । রাজা নৃসিংহদেব রায় এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীকালে ওনার বিধবা পত্নী রাণী শংকরী সেই কাজ সমাপ্ত করেন । হংসেশ্বরী মন্দিরের অদ্ভূত গড়ন । বাংলার অন্যান্য মন্দিরের থেকে ভিন্নরকমের । পঞ্চতল এই মন্দিরে তেরোটি উঁচু মিনার আছে যাকে বলে রত্ন । প্রতিটি মিনার যেন এক একটি প্রস্ফুটিত পদ্মের আকৃতিতে তৈরী । হংসেশ্বরী মন্দিরের গঠনশৈলীকে বলা হয় তান্ত্রিক সাতচক্রভেদ ।


 পাশেই অনন্ত বাসুদেবের মন্দিরটি ও নজর কাড়ে । সেটি বাংলার চালাঘরের আদতে পোড়ামাটির তৈরী । গায়ে টেরাকোটার অভিনব স্থাপত্য ।নিঁখুত কারুকার্য এই টেরাকোটার । কোনোটিতে রাধাকৃষ্ণ, কোনোটিতে দশাবতার, কোনোটিতে হনুমান । 


 এই দুই মন্দিরই এখন আরকিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অধীনে ।কাছেই ত্রিবেণী হল তিন নদী গঙ্গা, সরস্বতী ও বিদ্যাধরীর সঙ্গমস্থল । কিন্তু সরস্বতী নদী মজে যাওয়ায় দুটি নদী এখন দৃশ্যমান ।
মন্দির এবং সংলগ্ন জমিদার বাড়ীর পুরো চৌহর্দির সীমানা বরাবর পরিখা খনন করে সুরক্ষিত করা রয়েছে এখনো ।